এসিড সন্ত্রাস

নব্বইয়ের দশকে একটা ভয়াবহ সময় আমরা পার করেছি। এসিড সন্ত্রাসের সময়। প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হলেই বখাটেরা মেয়েদের মুখে এসিড ছুঁড়ে দিত। এতে মেয়েটার যা পরিনতি হত তা মৃত্যুর চেয়েও ভয়ংকর। একজন মানুষকে প্রাণে না মেরে এর চেয়ে বেশি শারীরিক-মানসিক-সামাজিক যন্ত্রণা দেয়া সম্ভব বলে আমার মনে হয়না। সেই অন্ধকার সময়টার কথা স্মরণ হলেও মন খারাপ হয়ে যায়। তবে আল্লাহর রহমতে আমরা সেটা পার করে এসেছি।

তবে, ইভটিজিং কিন্তু কমেনি। খবরে আসে বড় বড় ঘটনাগুলো। যেমন, ঢাকায় একটা স্কুলের বাচ্চা মেয়েকে বখাটে টেইলার-মাস্টার ছুরি মেরে খুন করল। সিলেটে এক ছাত্রনেতা কলেজছাত্রীকে মারার উদ্দেশ্যে চাপাতি দিয়ে ইচ্ছেমত কোপালো। আল্লাহর ইচ্ছায় মেয়েটা হায়াত পেয়ে গেল। ঘটনাটার ভিডিও প্রকাশ হওয়ায় চাঞ্চল্য হল। কিন্তু, আজকে যে গাজীপুরে এক স্কুলছাত্রীকে বখাটেরা শ্বাসরোধ করে মারল, তার ভিডিও নেই। বাগেরহাটে স্কুলছাত্রীকে চাকু মেরে মৃতপ্রায় ফেলে রেখে গেল, তারও ভিডিও নেই। আমাদের চামড়া মোটা। ভিডিও না থাকলে সামাজিক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করা যায়না। প্রতিদিন দেশের আনাচেকানাচে প্রতিটা রাস্তায় আর গলিতে যে অসংখ্য বখাটে আমাদের মেয়েদের কতো অপমান করে, লাঞ্চনা করে তার খবর কেউ রাখেনা।

আমি সবসময় মনোযোগ দিয়ে খবর পড়ি। ভাত খেতে খেতে খবর দেখি। এতে কোন রাজকার্য উদ্ধার হয়না। শুধু মন খারাপ হয়। হতাশা বাড়ে। আল্লাহ যদি আমাকে কখনো একটা মেয়ে দেন- সেই কলিজার টুকরাকে আমি কোন সমাজে বড় করব? কীভাবে নিরাপত্তা দিব? এসব নিয়ে মাঝেমাঝে দুশ্চিন্তা হয়।

মেয়ের জন্য আমি এই শ্বাপদসংকুল পৃথিবীর সাথে যুদ্ধ করার সাহস রাখি। কিন্তু একা কতোটা সম্ভব? প্রয়োজন সামাজিক আন্দোলনের।

ছোটবেলায় দেখতাম পাগলা কুকুরের উপদ্রব বেশি হলে সিটি কর্পোরেশনের গাড়ি টহলে বের হত। রাস্তার ধারে কোন নেড়ি কুকুর পেলে সেটার গলায় বিশেষ একধরণের ফাঁস দুর থেকে পড়িয়ে দিত। তারপর বিষ ইঞ্জেকশন দিত। আমাদের সমাজেও পাগলা কুকুরের উপদ্রব বাড়াবাড়ি রকমের বেশি হয়ে গেছে। এলাকায় এলাকায় পাগলা কুকুর নিধন কমিটি দরকার। রাস্তায় রাস্তায় ধরে ধরে নিধন করতে হবে।


লিখেছেন- ডা. কায়সার আনাম

Post a Comment

Previous Post Next Post