সতীত্ব কী জিনিস?



বাংলা প্রবচনে সতী নারী

সতীত্ব কী জিনিস?

কবি বলেছেন,

'সতীত্ব সোনার নিধি বিধি-দত্ত ধন,

কাঙ্গালিনী পেলে রাণী এমন রতন।'

অর্থাৎ, সতীত্ব হল স্বর্ণের সম্পদ, নারীর ধনরত্ন, তা সুমহান স্রষ্টার দেওয়া ধন। কোন কাঙ্গালিনী গরীব মহিলা যদি সে ধন লাভ করে, তাহলে সে রাজ-রাণী হয়ে যায়!

'নারীর নারীত্বের প্রধান সম্পদ হল তার দেহের নিভৃতে রক্ষিত মূল্যবান মোহর; যা সাপের মাথার মণির চেয়েও দামী। সাপ মণি-হারা হলে গাছের সাথে মাথা কুটে অঘোরে প্রাণ হারায়। পক্ষান্তরে ঝিনুক জীবন দেয়, তবু বুকের মুক্তোটি কাউকে নিতে দেয় না।' সতী নারী তার সতীত্ব ও নারীত্ব রক্ষা করে সকল শক্তি ব্যয় ক'রে।


সতীত্ব ধন রক্ষা করা মানে

বিবাহ-বহির্ভূত কোন অবৈধ সম্পর্কে না জড়ানো, ব্যভিচার বা যিনায় লিপ্ত না হওয়া, পরকীয়াতে জড়িয়ে না যাওয়া।


অসতীর গুণাবলী

'পানি ফেলে পানিকে যায়,

আন-পুরুষে আড় চোখে চায়,

তারে না বলিয়ো সতী,

স্বরূপে সে দুষ্টমতী।’

অর্থাৎ, কলসীর পানি ফেলে দিয়ে বাইরে পানি আনতে যায়। মানে মিছামিছি ছল ক’রে জল আনতে বাড়ির বাইরে যায় পরপুরুষের সাথে সাক্ষাৎ লাভের আশায়। মিথ্যা বাহানা ক’রে বাড়ির লোককে ধোঁকা দিয়ে বাড়ির বাইরে প্রেমিকের সাথে মিলিত হয়। আর পরপুরুষের দিকে চোরা-চাহনিতে তাকিয়ে থাকে।


সতীর গুণাবলী

'কামিনীর কথা শোনে তারে বলি পতি,

পতি পায়ে থাকে মন তারে বলি সতী।’

'পতির পায়ে থাকে মতি,

তবেই তাকে বলি সতী।’

অর্থাৎ, সতী স্ত্রী সর্বদা স্বামীর কথা শোনে, তার আনুগত্য করে, তাঁর সেবাযত্ন করে। অবাধ্য স্ত্রী প্রকৃত সতী নয়।

'সতীরে বলিলে ঢেমন কোণে বসে কাঁদে,

অসতীরে বললে ঢেমন কোমরে কাপড় বাঁধে।’

সতীর অন্যতম গুণ হল, সে কুঁদুলে জড়ায় না। তার চরিত্রে অপবাদ দিলে সে মনের দুঃখে কাঁদতে থাকে। পক্ষান্তরে অসতী নারীকে 'অসতী’ বললে লাফিয়ে ঝগড়া করতে লাগে।


সতীর মাহাত্ম্য

'সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে,

রমণী সুন্দর হয় সতীত্ব রক্ষণে।’

জী হ্যাঁ, যেমন সুপুরুষের গুণে সংসার গড়ে ওঠে, তেমনি সতীর গুণে সংসার সুখের হয়। আর সতী নারীই প্রকৃতপক্ষে সুন্দরী রমণী হয়। প্রকৃতপক্ষে অসতী বিশ্বসুন্দরী হলেও সে আসলে সেরা কুৎসিত।

জী হ্যাঁ, সভ্য সমাজে 'নারীর রূপ-লাবণ্য সতীত্বের মুখাপেক্ষী। কিন্তু সতীত্ব রূপ-লাবণ্যের মুখাপেক্ষী নয়।’

'সতী নারীর পতি যেন পর্বতের চূড়া,

অসতীর পতি যেন ভাঙ্গা নায়ের গুঁড়া।’

হ্যাঁ, সতীর বলেই তার স্বামী বল পায়। স্ত্রী অসতী হলে স্বামী ভেঙ্গে পড়ে।

নিশ্চয় অসতীকে কেউ পছন্দ করে না। এমনকি অসৎ পুরুষও না। এই জন্য বলা হয়েছে,

'সতীর জন্য কোল,

অসতীর জন্য কিল।’

অবশ্য কানা বেগুনের ডোগলা খদ্দেরও আছে।


আজীবন সতীত্ব

যে নারী আজীবন সতী থাকে, কৈশোরে, যৌবনে, প্রৌঢ়ত্বে ও বার্ধক্যে সতী থাকে, সেই আসল সতী। নচেৎ যৌবন হারিয়ে সতীগিরি প্রকৃত সতীত্ব নয়।

'বার করলাম রোযা করলাম স্বর্গে দিলাম বাতি,

যুবাকালে রঙ্গ করে বৃদ্ধকালে সতী।’

'সতী হল কবে,

সে মরেছে যবে।’

অবশ্য শেষ জীবনে তওবা করলে, তার পরিণাম ভালো হবে। কারণ, 'সব ভালো তার, শেষ ভালো যার।’


প্রকৃত সতী স্ত্রীই হল পুরুষের জন্য সুমহান স্রষ্টার সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার

মহানবী ﷺ বলেছেন,

الدُّنْيَا مَتَاعٌ وَخَيْرُ مَتَاعِ الدُّنْيَا الْمَرْأَةُ الصَّالِحَةُ.

“দুনিয়া (তার সবকিছুই) সম্পদ। আর দুনিয়ার সম্পদসমূহের মধ্যে সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ সম্পদ হল পুণ্যময়ী স্ত্রী।” (মুসলিম ৩৭১৬নং)


সংগ্রহেঃ আব্দুল হামীদ আল-ফাইযী আল-মাদানী

Post a Comment

Previous Post Next Post