ইউরিন ইনফেকশন : লক্ষণ ও প্রতিকার


ইউরিন ইনফেকশনে আক্রান্ত হতে পারেন নারী-পুরুষ উভয়ই। তবে এ সমস্যায় নারীরা বেশি ভুগে থাকেন। দীর্ঘদিন এ রোগে আক্রান্ত থাকলে মৃত্যুঝুঁকি বাড়ে। কারণ মূত্রনালী থেকে ইনফেকশন কিডনি পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে। এতে কিডনি বিকল হতে শুরু করে।


সম্প্রতি ‘বন্ড গার্ল’ খ্যাত মার্কিন অভিনেত্রী ও মডেল দীর্ঘদিন ইউরিন ইনফেকশনে ভুগে ৬৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। তার নাম তানিয়া রবার্টস। এরপরই দুনিয়াজুড়ে ইউটিআই রোগটি নিয়ে বেশ শোরগোল পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা এ রোগে আক্রান্তদের আরও সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।


বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের নারীরাও ইউটিআইতে ভুগে থাকেন। দীর্ঘসময় পায়খানা ও প্রস্রাব চেপে রাখার ফলে নারীরা নানা রকম শারীরিক জটিলতার মধ্যে পড়েন। চিকিৎসকরা বলছেন, শুধু নারীরা নন, পুরুষরাও ভুগতে পারেন মূত্রনালী সংক্রমণসহ নানা ধরনের জটিলতায়।


যেসব লক্ষণে বুঝবেন-১. প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া ২. ঘনঘন প্রস্রাবের বেগ ৩. প্রস্রাবের রং লালচে ৪. প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত ৫. দুর্গন্ধযুক্ত প্রস্রাব ৬. নারীদের গোপনাঙ্গে ব্যথা ৭. পুরুষদের মলদ্বারে ব্যথা



অবস্থা যখন সংকটাপন্ন হয়- ১. পেট ও কোমরের মাঝামাঝিতে ব্যথা অনুভব করা ২. শীত লাগা ৩. জ্বর ৪. বমি বমি ভাব ৫. বমি


কেন হয় ইউটিআই?একধরনের ব্যাকটেরিয়াঘটিত সংক্রমণ হলো ইউটিআই বা মূত্রনালীর সংক্রমণ। এ রোগের জন্য দায়ী হলো এশেরিকিয়া কোলাই (Escherichia coli) ব্যাকটেরিয়া। যদিও রোগটি অন্যান্য ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাকের কারণেও হতে পারে। শারীরিক গঠন, যৌন মিলন, বহুমূত্র রোগ, অতিস্থূলতা এবং বংশগত ধারার কারণে ইউটিআই হয়ে থাকে।


প্রাথমিকভাবে এ রোগের লক্ষণ হিসেবে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া ও ঘনঘন প্রস্রাবের বেগ হয়ে থাকে। যদি দীর্ঘদিন আপনি এমন সমস্যায় ভুগে থাকেন, তবে দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। অনেকের ক্ষেত্রে উপসর্গগুলো অস্পষ্ট থাকে। তাদের জন্য রোগ নির্ণয় কঠিন হয়ে পড়ে।


প্রতিরোধে করণীয়

>> প্রচুর পানি ও তরল খাবার খেতে হবে।


>> ব্যক্তিগত সুরক্ষা বজায় রাখতে পাবলিক টয়লেট ব্যবহারে সতর্ক থাকুন।


>> অপরিষ্কার পোশাক পরবেন না।


>> নিয়মিত গোসল করতে হবে।


>> একই কাপড় না ধুয়ে বেশিদিন পরিধান করা থেকে বিরত থাকুন।


>> গোপনাঙ্গ পরিষ্কার রাখতে হবে।


>> একই অন্তর্বাস দীর্ঘসময় ব্যবহার করবেন না।


প্রতিবছর প্রায় ১৫ কোটি মানুষ মূত্রনালীর সংক্রমণে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে এ সংক্রমণ বেশি দেখা যায়। ১৬ থেকে ৩৫ বছর বয়সীদের মধ্যে এ সংক্রমণের হার বেশি


ইউরিন ইনফেকশনের প্রধান সমস্যাগুলো হলো


১. জননতন্ত্রের ইনফেকশন।


২. দীর্ঘ সময় যাবৎ মূত্র ত্যাগ না করা বা আটকে রাখা।


৩. একবার ইউরিনে ইনফেকশন হলে আবারও হওয়ার আশঙ্কা থাকে, যদি সঠিক সময়ে চিকিৎসা না হয়।


৪. যাঁরা পানি খুব কম খান, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে পারেন না, দিনের পর দিন এ সমস্যা চলতেই থাকলে, তাঁদের ইউরিনে ইনফেকশন হয়।


ইউরিনে ইনফেকশনের জন্য দায়ী প্রধান ব্যাকটেরিয়া এশেরিকিয়া কোলাই। এই ব্যাকটেরিয়া পাকস্থলী ও খাদ্যনালিতে থাকে। রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা কমে গেলে এই ব্যাকটেরিয়া জননতন্ত্রে বাসা বাঁধতে পারে। একজন নারী বা পুরুষ সঠিক সময়ে মূত্র ত্যাগ না করে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে রাখে, তখন ই কোলাই দ্রুত আক্রমণ করে।


৫. বড় কোনো অস্ত্রোপচারের পরে ক্যাথেটার (মূত্র নির্গমনের জন্য দেওয়া বিশেষ ধরনের নল) দেওয়া থাকে। ক্যাথেটার দীর্ঘদিন থাকলে এবং সঠিকভাবে পরিষ্কার না করলেও ইউরিনে ইনফেকশন হয়। যাঁদেরকে ডায়াপার পরে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকতে হয়, তাঁদেরও এ সমস্যা হতে পারে।


৬. একাধিক নারী-পুরুষের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক, স্যাঁতসেঁতে জায়গায় বসবাস, অতিরিক্ত নোংরা টয়লেট ব্যবহার করা, নিয়মিত গোসল না করা, যৌন রোগে আক্রান্ত বা রোগীদের ইউরিনে ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কা খুব বেশি।


৭. কিডনি বা জননতন্ত্রের কোথাও পাথর থাকলেও এ সমস্যা হয়।


লক্ষণগুলো:

১. হঠাৎ উচ্চমাত্রার জ্বর বা জ্বর জ্বর লাগা, কোমরের দুই পাশে ব্যথা, তলপেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব, প্রস্রাবে প্রচণ্ড জ্বালাপোড়া, চুলকানো।


২. দুর্গন্ধময় প্রস্রাব। অনেক সময় ফেনাযুক্ত প্রস্রাব হয়। সঠিকভাবে না-ও হতে পারে।


৩. অনেক সময় মূত্রের সঙ্গে রক্তও যেতে পারে।


৪. ঊরুর দুই কোনাতে ব্যথা থাকতে পারে।


প্রতিকার:

১. আমাদের নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি, পুষ্টিকর খাবার, মৌসুমি ফল খেতে হবে।


২. ঘুমানোর আগে মূত্র ত্যাগ করে ঘুমাতে হবে।


৩. নিয়মিত গোসল ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। পরিধেয় বস্ত্র, বাসস্থান, টয়লেট পরিচ্ছন্ন হওয়াটা জরুরি।


৪. যাদের কিছুদিন পর পর ইউরিনে ইনফেকশন হয়, তাঁরা দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।


৫. ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।


৬. যাঁরা অতিরিক্ত ঘেমে যান, তাঁরা নিয়মিত লিটার পানি পান করুন।


লিখেছেন: ডা. সামিউল ইসলাম

Post a Comment

Previous Post Next Post