বিষন্নতা কি?
বিষন্নতাকে আমরা সাধারন ভাবে “মনমরাভাব” বলতে পারি। কোন কোন মনবিজ্ঞানী বলেছেন দুঃখ ও অসুস্থতাবোধ এর সমষ্টিকে বিষন্নতা বলে (Depression is the combination of misery and malaise)। আবার কেউ কেউ রুগ্ন দুঃখকে বিষন্নতা বলেছেন (Depression is defined as morbid sadness) । আমাদের জীবনে অনেক কষ্ট আসে,দুঃখ আসে, পরীক্ষায় রেজাল্ট খারাপ হতে পারে , আরো অনেক কারনে আমাদের “মনমরা ভাব” থাকতে পারে , মনখারাপ হতে পারে । তাহলে আমরা কখন বুঝবো যে এই মনখারাপ বা মনমরাভাব অসুস্থতায় রূপ নেয় বা রূপ নেবে?
আসুন দেখি মনোবিজ্ঞান কি বলে:
1. যদি কোন কারন ছাড়াই দুঃখবোধ/মনখারাপ/কিছু ভালো না লাগা/বিষাদ/ মনমরাভাব দেখা দেয়।
2. যদি সামান্য কারনেই এই দুঃখবোধ গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী হয়।
3. যথেষ্ট সঙ্গত কারণে সৃষ্টি মনখারাপ/বিষাদময়তা যখন দীর্ঘস্থায়ী ও গভীরতর হয়।
এই অবস্থাকে(অসুস্থতাকে) তখন আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে ডিপ্রেসিভ ইলনেস (Depressive illness) বলে।
মজার ব্যাপার হলো পুরুষের তুলনায় মহিলারা দ্বিগুন বিষন্নতায় আক্রান্ত হয়। আর বিবাহিত মহিলাদের বেলায় আরো বেশী। তালাকপ্রাপ্তা কিংবা স্বামী থেকে বিচ্ছিন্নভাবে বসবাসরত মহিলাদের বেলায় আরো অনেক বেশী।
লক্ষন:
1. সব সময় বিষন্ন থাকা,
2. মন ভাল লাগেনা,
3. নিঃসঙ্গতা,
4. আগ্রহের অভাব,
5. কৌতুহলের অভাব,
6. মনোযোগের অভাব (এর ফলে স্মরণশক্তি হ্রাস),
7. ক্রন্দন প্রবণতা (Crying spell),
8. কর্মক্ষমতা হ্রাস,
9. অপরাধবোধ,
10. বর্তমান সম্বন্ধে অসহায় বোধ,
11. ভবিষ্যত সম্বন্ধে অনীহা,অনিশ্চিত বা অন্ধকার
12. নিজেকে সব কিছুর জন্য অযোগ্য মনে করা,
13. আত্বহত্যার প্রবনতা ও চেষ্টা,
14. নিদ্রাহিনতা (সাধারনত শেষ রাত্রের অনিদ্রা),
15. কোন শারীরিক কারন ছাড়া ওজন হ্রাস,
16. কোন শারীরিক কারন ছাড়া মহিলাদের মাসিক ঋতুর অনিয়ম বা বন্ধ থাকা,
17. কোন শারীরিক কারন ছাড়া মাথা থেকে পা পর্যন্ত শরীরের নানান অঙ্গে বিভিন্ন উপসর্গ অনুভব করা। ইত্যাদি।
মনে রাখতে হবে:
যখন নানাবিধ শারীরিক উপসর্গের কোন দৈহিক ভিত্তি বা কারন খুজে পাওয়া যাবে না অথচ রোগী বা রোগিনী নিজেকে শারীরিকভাবে অসুস্থ মনে করে এবং এর জন্য চিকিৎসার প্রার্থী হয়। যখন এইভাবে দিনের পর দিন রোগী চিকিৎসক ও চিকিৎসা কেন্দ্রের দ্বারে দ্বারে ঘুরে কিন্তু রোগ ভালো হয়না উপসর্গের স্থায়ী নিরাময় হয়ে উঠে না , তখনই চিন্তা করতে হবে যে, রোগী বা রোগিনী বিষন্নতায় আক্রান্ত হয়েছে।
কারন:
1. বংশগত
2. জৈব-রাসায়নিক(মস্তিষ্কে “নর এডরিনালিন” ও “ফাইবহাইড্রক্সিট্রিপ্টামিন” এর স্বল্পতা,বিভিন্ন “হরমোনের”বিশৃঙখ্লা এবং কোষের অভ্যন্তরে সোডিয়ামের আধিক্য,ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের গোলযোগ, ইত্যাদি।)
3. কতগুলো ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া (উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ, জন্মনিয়ন্ত্রক বড়ি ইত্যাদি)
4. দৈহিক অবস্থা ও ব্যাধি (মস্তিষ্কে টিউমার, সন্তান প্রসবের পর,ইত্যাদি)
মনস্তাত্ত্বিক কারন:
1. বাল্যকাল থেকে যার ব্যাক্তিত্ত্ব দূর্বল,
2. বাল্যকালে মা-এর বিবাহ বিচ্ছেদ বা বাবা থেকে মা পৃথকভাবে বসবাস করে,
3. অযত্ন বা অত্যাধিক সুরক্ষতিত শৈশব অবস্থা,
সামাজিক কারন:
1. যারা ১১ বছর বয়সে মা হারিয়েছেন,
2. যারা স্বামীর সমর্থন পাননি,
3. যারা কোন কাজকর্ম করে না,
4. আপনাদের একটা মজার তথ্য জানাই , প্লিস কেঊ রাগ করবেন না । যে সমস্ত মহিলাদের স্বামী বিদেশে বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে চাকরি করে এবং ঐ মহিলারা শ্বশুরালয়ে বা একাকী থাকে , বেশীরভাগ তাদেরকে বিষন্নতা রোগ আক্রমন করে। একে একটি চমৎকার নামকরন করা যায় “দুবাই সিনড্রন (Dubai syndrome)”/ “সৌদি সিনড্রম” ইত্যাদি। সো, প্রবাসিরা সাবধান , বউয়ের সাথে সুসম্পর্ক রাখুন । নাইলে খবর আছে ,বিষন্নতা আপনার বউকে বিষন্ন করে ফেলবে।
5. মা-বাবা যদি সন্তানদের থেকে দূরে থাকে সেক্ষেত্রে তাদের বিষন্নতা আক্রমন করে, একে “এমটি নেষ্ট সিনড্রম”(Emopty nest syndrome) বলে।
চিকিৎসা:
উপরে যেসব বিষয়গুলোকে দায়ী করা হয়েছে এগুলো এড়িয়ে চলুন। আর চিকিৎসা ব্যাপারটা চিকিৎসকের জন্য রেখে দিন, যথাসময়ে তাদের শরণাপন্ন হোন।
লেখক: ডা. মো. ফাইজুল হক
Post a Comment