Low Back Pain (LBP) | কোমর ব্যথা



আজকে আমরা Low Back Pain (LBP)- কোমর ব্যথা ব্যাপারে জেনে নেব সবকিছু।


আমাদের মেরুদন্ডের হাড় মাথার নিচ থেকে পায়ুপথ পর্যন্ত বিস্মৃত। এখানে ৩৩ টা ভার্টিবা আছে ।এই ভারর্টিব্রার অনেকগুলো নাম আছে । থোরাসিক অংশের নিচে থাকে লাম্বার ভারর্টিব্রা। লাম্বার ভারর্টিব্রা থেকে পায়ুপথের কক্সিক ভারর্টিব্রা পর্যন্ত এই অংশকে আমরা লো ব্যাক বলি।সাধারণভাবে কোমর ব্যথা কে আমরা এই ব্যাথা বুঝিয়ে থাকি।


Low Back Pain(LBP)-কোমর ব্যাথা:

LBP With Radiation Pain Both Lower Limbs-কোমর থেকে পায়ে ব্যাথা:


শতকরা ৯০ শতাংশ লোক জীবনের কোনো না কোনো সময়ে কোমর ব্যথায় ভোগে। স্বল্পমেয়াদি ব্যথা এক মাসের কম সময় থাকে এবং দীর্ঘমেয়াদি বা ক্রোনিক ব্যথা এক মাসের অধিক সময় থাকে। উপযুক্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করলে ৯০ শতাংশ রোগী দুই মাসের মধ্যে ভালো হয়ে যায়।


লক্ষণ বা উপসর্গ:

* প্রথম দিকে কোমর ব্যথা কম থাকে এবং ক্রমান্বয়ে তা বাড়তে থাকে।

* অধিকাংশ ক্ষেত্রে চিৎ হয়ে শুয়ে থাকলে এ ব্যথা কিছুটা কমে আসে। কোমরে সামান্য নড়াচড়া হলেই এ ব্যথা বেড়ে যায়।

* ব্যথার সঙ্গে পায়ে ব্যথা নামতে বা উঠতে পারে, হাঁটতে গেলে পা খিঁচে আসে বা আটকে যেতে পারে, ব্যথা দুই পায়ে বা যে কোনো এক পায়ে নামতে পারে। কোমরের মাংসপেশি কামড়ানো ও শক্ত ভাব হয়ে যাওয়া।

* প্রাত্যহিক কাজে, যেমন- নামাজ পড়া, তোলা পানিতে গোসল করা, হাঁটাহাঁটি করা ইত্যাদিতে কোমরের ব্যথা বেড়ে যায়।


কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?

প্রথমে কোমরে অল্প ব্যথা থাকলেও ধীরে ধীরে ব্যথা বাড়তে থাকে। অনেক সময় হয়তো রোগী হাঁটতেই পারে না।পায়ে ঝিনঝিন ধরে থাকে।সকালে ঘুম থেকে উঠে পা ফেলতে সমস্যা হতে পারে। পা অবশ ও ভারী হয়ে যায়। পায়ের শক্তি কমে যায়। মাংসপেশি মাঝে মধ্যে সংকুচিত হয়ে যায়।

ব্যথার পাশাপাশি জ্বর, শরীরের ওজন হ্রাস, অরুচি, অতিরিক্ত ঘাম ইত্যাদি উপসর্গ থাকলে এবং ব্যথাটা কোমর ছাড়িয়ে পায়ের দিকে বিশেষ করে এক পায়ের হাঁটুর নিচ পর্যন্ত ছড়ালে অথবা এক পায়ে তীব্র ব্যথা বা অবশভাব হলে সতর্ক হতে হবে। প্রস্রাব বা পায়খানার সমস্যা, মলদ্বারের আশপাশে বোধহীনতা, মেরুদণ্ডে বক্রতা, পায়ের দুর্বলতা বা পায়ের মাংসপেশির শুষ্কতা ইত্যাদি উপসর্গকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।

কোমর থেকে নিতম্ব, ঊরু ও পায়ের আঙুল পর্যন্ত ব্যথা বিস্তৃত হলে। পায়ে দুর্বলতা বা অবশ ভাব হলে। হাঁচি, কাশি দিলে বা সামনে ঝুঁকলে ব্যথা বেড়ে যায়। প্রস্রাব বা পায়খানার নিয়ন্ত্রণ না থাকলে। শোয়া অবস্থায় বা শোয়া থেকে ওঠার সময় ব্যথা হলে। ব্যথার সঙ্গে উল্লিখিত যে কোনো উপসর্গ থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।


কোমর ব্যাথার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কারনঃ

১. যাঁরা অফিসে দীর্ঘক্ষণ বসে একই ভঙ্গিতে কাজ করেন। এতে দেখা যায়, কোমরে ব্যথা প্রচণ্ড হয়ে থাকে।


২. বসার চেয়ার টেবিল ঠিকমতো না হলে বা ঠিকমতো না বসলে বা সামনে-পেছনে ঝুঁকে বসলে কোমরে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হতে পারে।


৩. দীর্ঘক্ষণ ড্রাইভিং করলে বা বেশি সামনে ঝুঁকে গাড়ি চালালে কোমর ব্যথা হতে পারে।ড্রাইভিংয়ের সময় পেছনে কিছু সাপোর্ট নেওয়া উচিত।


৪. যাঁরা শুয়ে বা কাত হয়ে বই পড়েন বা অন্য কাজ করেন, তাঁদের মেরুদণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ব্যথা অনুভূত হয়।


৫. অনেকেই আছেন যাঁরা কোনো ভারী জিনিস সঠিক নিয়মে তোলেন না। ফলে মেরুদণ্ডে অস্বাভাবিক চাপ পড়ে এবং তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ব্যথা হয়।


৬. অতিরিক্ত দেহের ওজন বৃদ্ধির কারনে কোমর ব্যাথা হতে পারে।


৭. কম বয়সীদের দীর্ঘদিন মাষ্টারবেশন করার কারনে।


৮. মা দের হ্মেত্রে প্রেগন্যান্সিতে সিজারিয়ান ডেলিভারির কারনে কোমর ব্যাথা হতে পারে।


১০. জীবন যাপনে স্বাভাবিক মুভমেন্ট না করলে।


১১.লাম্বার স্পনডোলাইসিস : কোমরের পাঁচটি হাড় আছে। কোমরের হাড়গুলো যদি বয়সের কারণে বা বংশগত কারণে ক্ষয় হয়ে যায়, তখন তাকে লাম্বার স্পনডোলাইসিস বলে।


১২. পিএলআইডি : এটিও শক্তিশালী একটি কারণ। এটি সাধারণত ২৫ থেকে ৪০ বছরের মানুষের ক্ষেত্রে বেশি হয়। মানুষের হাড়ের মধ্যে ফাঁকা জায়গা থাকে। দুই হাড়ের মাঝখানে এক ধরনের পিচ্ছিল নরম জিনিস থাকে, এটা বের হয়ে পায়ের দিকে চলে যাওয়া রগের উপর পেশ্রার দেয়, যার ফলে বাথ্যা কোমর থেকে পায়ের দিকে যায় এবং রক্তনালি দূর্বল হয়ে যায়।


১৩. বড় কোনো আঘাতের ইতিহাস থাকলে, কোমর ব্যথার পাশাপাশি বুকে ব্যথা হলে, রোগীর আগে কখনও যক্ষ্মা হয়ে থাকলেও বাড়তি গুরুত্ব দিতে হবে।


১৪. ক্যান্সার, অস্টিওপোরোসিস, এইডস, দীর্ঘকাল স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ সেবনের ইতিহাস থাকলে কোমর ব্যথাকে অবহেলা করা চলবে না।


কেন হয় এই ব্যথা ?

সাধারণত এই অংশের মধ্যে যে সমস্ত পেশি,লিগামেন্ট জড়িত এগুলোর মাসকুলো লিগামেন্টাল ডিস অর্ডার বা সমস্যার জন্য এটা হতে পারে। সাধারণত এই ভারর্টিব্রারি ফাঁকে ফাঁকে যে নরম হাড় থাকে যাকে আমরা ডিক্স বলি, সেটার ডিস অর্ডারের জন্য হতে পারে। যেকোন জয়েন্টের ডিজেনারেশনের জন্য হতে পারে। মেরুদন্ডে যে ক্যানাল থাকে সেটা যদি কোনভাবে সংকুচিত হয়ে যায় সেক্ষেত্রে হতে পারে। স্নায়ুর ওপর দিয়ে কোনো চাপ পড়ে সেক্ষেত্রে হতে পারে ।এছাড়া আরো অনেক ছোটখাটো কারণ রয়েছে কোমর ব্যথার।


ডা:মোহাম্মদ আলী, চীফ কনসালট্যান্ট, বিজিএমইএ, সেক্টর-১৩, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০।

Post a Comment

Previous Post Next Post