শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায়


শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য নিত্যদিনের একটি সমস্যা, বিশেষ করে শিশু যখন নিজে পায়খানা করতে শেখে, তখন এই জটিলতা দেখা দেয়। সাধারণত দুই থেকে তিন বছরের শিশুর মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। তবে বর্তমানে সব বয়সের শিশুর মধ্যে এ সমস্যা দেখা যাচ্ছে। 


লক্ষণ বা উপসর্গ:

শিশু যদি সপ্তাহে অন্তত তিনবারের কম মলত্যাগ করে, মল  যদি শক্ত হয় বা মোটা ধারায় বের হয়, মলের সঙ্গে কখনো রক্তপাত হয়, মল বড়ি বড়ি আকারের হয়,তবে এটিকে কোষ্ঠকাঠিন্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এছাড়া আরো কিছু লক্ষণ রয়েছে। এগুলো হলো, মল ত্যাগ করতে ব্যথা পাওয়া, শৌচাগারে যেতে অনীহা,  খাবারে রুচি কমে যাওয়া, বমি ভাব ও পেট ব্যথা। আর এক বছরের বেশি বয়সী শিশুর যদি মাঝে মধ্যে প্যান্টে লেগে থাকে তবে বুঝতে হবে শিশুটির কোষ্ঠকাঠিন্য হয়েছে। পটি করার সময় অতিরিক্ত প্রেসার দেওয়া এবং কান্নাকাটি করা।


কারণ:

কোষ্ঠকাঠিন্য কারণগুলো হলো, আঁশজাতীয় পর্যাপ্ত খাবার (সবজি, টাটকা ফল না খাওয়া, পর্যাপ্ত পানি বা তরল খাবার না খাওয়া, শিশুকে সঠিক পদ্ধতিতে পায়খানা করতে না শেখানো। এছাড়া অতিরিক্ত মানসিক চাপ (নতুন পরিবেশ, পরিবারে নতুন শিশুর আগমন, স্কুলে প্রথম ভর্তি হওয়ার কারণে) হরমোনের সমস্যা বা জন্মগত রোগের কারণ ও কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা হতে পারে।


যে সব জটিলতা হতে পারে:

কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে মলদ্বার ফেটে যেতে পারে এবং ক্ষত হয়ে মলদ্বারে চুলকানি হতে পারে, দীর্ঘমেয়াদি ক্ষত হতে পারে, দীর্ঘদিন নিয়মিত পায়খানা না করার কারণে মলত্যাগের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া অকার্যকর হয়ে অন্ত্রের জটিল রোগ দেখা দিতে পারে। দীর্ঘদিনের ক্ষুধামান্দ্য থাকলে শরীর পর্যাপ্ত পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হয়, শিশুর ওজন বাড়ে না, এমনকি মানসিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।


প্রতিরোধব্যবস্থা:

শিশুকে ছোটবেলা থেকে সঠিক খাবারে (শাকসবজি, টাটকা ফলমূল, ডাল) অভ্যস্ত করে তুলতে হবে। যেসব খাবারে (গরুর দুধ, শুকনা ও প্রক্রিয়াজাত খাবার) পায়খানা শক্ত হতে পারে, তা পরিহার করতে হবে। শিশুকে পর্যাপ্ত পানি ও তরল খাবার দিতে হবে।  এছাড়া ছোটবেলা থেকেই নিয়মিত সঠিকভাবে পর্যাপ্ত সময় নিয়ে পায়খানা করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে এবং কোনভাবেই যাতে শিশুর মানসিক চাপে না থাকে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে।

শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য রোধে করণীয় কী ?

 ১) শারীরিক কার্যক্রম বা হালকা ব্যায়াম

 ২) কুসুম গরম পানিতে গোসল

৩) অধিক পরিমাণে পানি পান করানো

৪) আঁশযুক্ত খাবার 

৫) ফলের রস 

৬) নিয়মিত মলত্যাগের অভ্যাস 

৭) জাঙ্কফুড এবং বেশি পরিমাণে মাংস জাতীয় খাবার না খাওয়ানো

৮) পেট ম্যাসেজ

৯) খাদ্যাভাস পরিবর্তন।


চিকিৎসা:

 জটিলতার শুরুতেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভাল। প্রাথমিকভাবে পায়খানা নরম করার ঔষধ, পর্যাপ্ত আঁশ জাতীয় খাবার ও দৈনন্দিন অভ্যাস পরিবর্তন করতে পরামর্শ দেয়া হয়,যা অবশ্যই দীর্ঘদিন ধরে মেনে চলতে হবে। যাদের সমস্যা দীর্ঘমেয়াদি বা উপসর্গ ইতিমধ্যে দেখা দিয়েছে, তাদের চিকিৎসকের পরামর্শ চলতে হবে।


- [ডা: মোহাম্মদ আলী, চীফ কনসালট্যান্ট, বিজিএমইএ]

Post a Comment

Previous Post Next Post