অভিমানী ছেলে

 


ইমার্জেন্সীতে রোগী এসেছে। বাবা-মায়ের সাথে অভিমান করে ঘুমের ওষুধ (সিডাটিভস) অতিরিক্ত সেবনের ফলে বিষক্রিয়া দেখা দিয়েছে। রোগীর অবস্থা নাজুক। দ্রুত কিছু করতে হবে। ডিউটি টীমে আমি একজন ফার্মাসিস্ট, সাথে আছেন ৪ জন চিকিৎসক এবং বাকিরা নার্স। চিকিৎসকরা মতামত দিলেন স্টোমাক ওয়াশ, মানে পাকস্থলি পরিষ্কার করার। আমি হিস্টোরী থেকে জেনে নিলাম গতকাল রাতে সেবন করা হয়েছে সে হিসেবে প্রায় ১০ ঘন্টা হয়ে গেছে। বুঝলাম লাভের লাভ কিছুই হবেনা স্টোমাক ওয়াশ করলে, ওষুধ পেট থেকে ব্লাডে চলে গেছে। চিকিৎসকগণ এন্টিডট প্রদানের চেষ্টা করছেন। যা করতে হবে দ্রুত করতে হবে, সময় দৌঁড়াচ্ছে খুব দ্রুত। মাথায় ক্যালকুলেশন্স চলে আসলো। ড্রাগ হিস্টোরি ঘেটে দেখলাম সিডাটিভ হিসেবে এমোবারবিটাল নিয়েছে যার কেমিক্যাল স্ট্রাকচার ইমাজিন করলাম। এটা যা ব্যাসিক সাবস্ট্যান্স, বারবিচুরেটস (ক্ষারীয়)। যেহেতু একবার রক্তে চলে গেছে (এবজর্পশন হয়ে গেছে) সুতরাং এর এক্সক্রিশনটা জরুরী। প্রসাবের মাধ্যমে (ইউরিনারী একস্ক্রিশন) শরীর থেকে বের করে দিতে হবে। এজন্য চাই প্রসাবকে এসিডিক করতে হবে। এমোনিয়াম লবণগুলো খুব ভালো ভালো এসিডিফাইং এজেন্ট। সুতরাং অন্যান্য এনটিডটের সাথে হাসপাতালের ফার্মেসি থেকে এমোনিয়াম ক্লোরাইড স্যালাইন অর্ডার করে দিলাম। আলহামদুলিল্লাহ্‌, সময়মত সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছিলাম আমি এবং আমার পুরো টীম। রোগীকে পরবর্তীতে পুরোদিনের জন্য ইন্সেন্টিভ কেয়ারে রেখেছিলাম। সুস্থ হয়েছিল, বাসায় পাঠানোর আগে অবশ্য রোগীকে দুই চারটা বকা আর বাবা-মাকে কিছু নসীহত দিয়ে হয়েছিল আমাদের।


ওষুধ একটা কেমিক্যাল। একটা কেমিক্যাল আর তার বায়োলজিক্যাল ইফেক্ট- এই দুইটার মিথস্ক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ ফার্মাসিস্ট ছাড়া আর কে করবে! আপনি ফার্মাসিস্ট, আপনার দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হন, চিকিৎসা টীমের সবার নিজস্ব আলাদা আলাদা কর্তব্য থাকবে, কিন্তু সবার একটা কমন লক্ষ্য থাকে, তা হলো রোগীর জন্য সর্বোচ্চ আর অপটিমাম ট্রীটমেন্ট। সুতরাং নিজের সর্বোচ্চ উজার করুন, নিজের আহরিত জ্ঞানলে ব্যবহারিক কাজে লাগালে পুরো স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নতি হবেই, ইনশা আল্লাহ।


© সায়েম আরাফাত

Post a Comment

Previous Post Next Post