সুখ যেখানে ধোকা দেয়



আট নয় বছর সংসার করার পর স্ত্রী তার স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে ,স্বামী তাকে ভালোবাসে না। ঠিক মতো খরচ দেয় না। সংসারে তাঁদের একটা সন্তান আছে। 

স্ত্রী এখন বিচ্ছেদ চায়। 

কিন্তু স্বামী নাছোড় বান্দা। 

যে কোন ভাবেই হোক স্ত্রীকে ধরে রাখার পক্ষে সে। আত্মীয় স্বজনের কাছে দেন দরবার করেও স্ত্রীর মত পাল্টানো যাচ্ছে না । স্ত্রী বিচ্ছেদের পক্ষেই। 

১ বছর ধরে টানাটানির পর সেই সংসারের ইতি টানতে হলো। 

মা থাকার পরেও বাচ্চাটা হয়ে গেলো এতিম। 

কিছুদিন পর তার স্ত্রী বিয়ে করলো স্বামীরই এক বন্ধুকে । সেই বন্ধুর সাথে পরিচয় হয়েছিল সোস্যাল সাইটের সূত্র ধরে। মুখে ভাবী ভাবী করলেও বন্ধুর স্ত্রীর জন্য যে তার মনে কুমতলবের জন্ম নিয়েছে সেটা বুঝতে অনেক দেরি হয়ে যায়। 

কিন্তু বিধির বিধান ছিল অন্য কিছু। 

মহিলার সেই সংসারও টিকলো না। যাকে বিয়ে করেছিল সেই লোক মারা গেলো রোড এক্সিডেন্টে। 

এইবার মহিলা পড়লো বেকায়দায়। 

সন্তানও তার কাছে নেই। আবার আগের স্বামীর কাছেও ফিরে যাওয়ার উপায় নেই। শশুড় বাড়িতে বসে বসে খাবে সেই রাস্তাও বন্ধ। 

বাধ্য হয়ে মহিলা একটা স্কুলের সেকেন্ড গ্রেড পোস্টের চাকুরী নিলো। 

তার আগের স্বামী কিন্তু বসে নাই। বিচ্ছেদের পর সেও নতুন করে সংসার গুছিয়ে নিয়েছে। নিজের নতুন স্ত্রীর কাছেই সন্তানকে বড় করছে। নতুন স্ত্রীর ঘরেও আরো একটা সন্তান আসছে। 

একদিন মহিলা আবিস্কার করলো তার আগের ঘরের সন্তান সেই একই স্কুলে পড়াশুনা করে। তার আগের স্বামী নতুন স্ত্রীকে নিয়ে প্রায়ই প্যারেন্টস ডে তে আসে। নিয়তি তাকে এমন কিছু দেখাবে সেটার জন্য মহিলা প্রস্তুত ছিলেন না। 

মানসিক ভাবে পঙ্গু করে দেয়ার জন্য এইটুকুই যথেষ্ট। 

ক্লোজআপ কাছে আসার গল্প সহ বিভিন্ন দিবস ভিত্তিক যে নাটক গুলো দেখানো হয় অথবা রমরমা যে প্রেমের গল্পগুলোতে বাজার সয়লাব হয়ে গেছে তার মূল থিম কিন্তু একটাই। সেটা হলো কিভাবে অন্যের গফ বা স্ত্রীকে ভাগিয়ে নিয়ে আসা যায়। 

ব্যাপারটাকে কাছে আসার গল্প বলে চালিয়ে দেয়া হলেও এইরকম কাছে আসার পরের গল্প গুলো ঠিক কেমন হয় সেটা জানা গেলে আস্ত একটা উপন্যাস লিখে ফেলা সম্ভব। 

যে ভালোবাসা একটা ঘর গড়তে পারে , সেই ভালোবাসাই একটা ঘর ভেঙ্গে দিতে পারে। 

ব্যাচ ২৭ অথবা বড় ছেলের মতো নাটকে যেভাবে মেহজাবিন আর মিথিলার মতো মডেলরা বিয়ের আগের দিন প্রেমিককে মুখে তুলে ভাত খাইয়ে বিয়ের দিন স্বামীর সাথে বাসর করে জীবন কিন্তু আসলে ঠিক সেরকম না। 

স্বামীর সাথে ফর্মাল সংসার করে প্রাক্তনের জন্য বালিশ ভেজানো মেয়েটাকে উদাহরন করে যখন কেউ বলে , ভালোবাসা অমর হয় ,তখন বিষয়টাকে আসলে ভালোবাসা বলে না । তখন এটাকে বলা হয় ঠগবাজি । 

রবীন্দ্রনাথ তার ভাবীর সাথে প্রেম করে রেকর্ড করেছেন । ভাইয়ের বউকে নিয়ে কবিতা লিখে অমর হয়েছেন । আপনি যদি সেই রাবিন্দ্রিক ভালোবাসা দেখাতে গিয়ে বন্ধুর স্ত্রী অথবা ভাইয়ের স্ত্রীকে প্রপোজ করেন তখন আপনাকে লম্পট বলাই শ্রেয় । 

এইটা ভালোবাসা নয় । 

এইটা কাছে আসার গল্পও না । 

ভালোবাসা খুঁজুন সেই দম্পতির মধ্যে যেখানে স্ত্রী তার স্বামীর লুকিয়ে হলেও একটু ভালো খাবার জমিয়ে রাখে। 

ভালোবাসা আছে সেখানে ,যখন রিকশাওয়ালা তার স্ত্রীর জন্য টাকা জমিয়ে ইমিটেশনের গয়না কিনে দেয় । 

অস্থির স্বামী তার প্রেগন্যান্ট স্ত্রীর জন্য জায়নামাজে কান্না করে। 

 হ্যা ওইটাই কাছে আসার গল্প। 


কার্টেসী: আব্দুল্লাহ আরাফাত

Post a Comment

Previous Post Next Post