অল্প বিদ্যা ভয়ংকর



মেয়েটা বেশ সুন্দর।

স্যারের চেম্বারে এসে টুক-টাক চিকিৎসা নিলো সেদিন।

পরের দিন ঘটনা ঘটালো।

পুরা এক বোতল হারপিক খেয়ে হাসপাতালে ভর্তী হলো..

হারপিক জিনিসটা আসলে ভয়াবহ।

গলা দিয়ে যেতে যেতে পুরা খাদ্যনালী ধ্বংস করে দেয়।

মেয়েটির খাদ্যনালী অনেকটাই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিলো।

অনেক চেষ্টা করা হলো, যতটুকু আছে বাচানোর। সম্ভব হলো না।

৩ মাস পর তাকে যখন দেখলাম,

দেখে "মেয়েটা সুন্দর" বলার কোন উপায় নেই। পুরা জীবন্ত লাশ।

মুখ দিয়ে খেতে পারে না। পেটের মাঝে ফুটো করে আমরা ডিরেক্ট টিউব ফিট করে দিয়েছিলাম।

সেটা দিয়ে খায়। না পায় স্বাদ না পায় গন্ধ।

ভাবছেন প্রেমঘটিত ব্যাপার?

না সেরকম কিছু না।

সেরকম হলে এতকিছু লিখতাম না।

প্রেমের জন্য যারা আত্মহত্যার চেষ্টা করে, তাদের কে সারাজীবনই "রাম ছাগল" ক্যাটাগরী মনে করে এসেছি। মেয়ে হলে "রাম ছাগী"..

ঘটনা অন্য,

সে যখন প্রথম স্যারের চেম্বারে চিকিৎসা নিতে এসেছিলো, তখন তাকে HBsAg নামক হেপাটাইটিস বি ভাইরাস এর টেস্ট টা করতে দেওয়া হয়েছিলো। এটি ভয়াবহ লিভার ধ্বংসকারী ভাইরাস।

সেই মেয়ের রিপোর্ট আসলো পজিটিভ।

সে রিপোর্ট নিজে পড়েই বুঝলো যে তার শরীরে ভাইরাস আছে।

তারপর ইন্টারনেটে একটা সার্চ দিলো।

সার্চ দিয়ে জানতে পারলো এটি ভয়াবহ ভাইরাস। যেটি আক্রমনের ফলাফল- জন্ডিস, পেটে পানি, লিভার ফেল, অসহনীয় মৃত্যু...

সাথে সাথে সে ভাবলো যে জীবন রেখে লাভ নেই।

এটাকে শেষ করে দেই।

ব্যাস.. হারপিক এর বোতল হাতে নিলো..

ফলাফল তো উপরে বললামই..

আহারে মেয়ে,

তুমি যদি রিপোর্ট টা নিয়ে আমাদের কাছে আসতে,

তাহলে আমরা অন্তত এটুকু বলতাম, যে এখনো তোমার লিভার ধ্বংস হয় নি। শুধু ভাইরাস টা শরীরে ঢুকেছে মাত্র। এখন চিকিৎসা শুরু করলে, এ ভাইরাস তোমাকে কিছু করতে পারবে না। স্বাভাবিক জীবন হবে। নাতির ঘরের পুতির মুখ দেখে মরতে পারবা যদি আল্লাহ চায় তো।

তা না করে তুমি ইন্টারনেটে সার্চ দিলে। অসম্পূর্ণ কিছু তথ্য জানলে। ধরে নিলে সব শেষ।

"ইন্টারনেট এ রোগ সম্পর্কে সার্চ" পুরো পৃথিবী জুড়ে বর্তমানে এটি বড় সমস্যা। রোগী রা রোগ সম্পর্কে ইন্টারনেট ঘেটে উদ্ভট ধারনা নিয়ে আসে।

পৃথিবী জুড়েই আমরা ডাক্তাররা এ ব্যাপারটা নিয়ে বিরক্ত।

মাথা ব্যাথা হলেই ব্রেন টিউমার ভেবে দুনিয়ার সব টেস্ট করে ফেলে এমন পাগল অনেক দেখেছি।

কারন তারা গুগল করে পেয়েছে যে মাথা ব্যথা ব্রেন টিউমারের একটি লক্ষন।

আমার ছোটবেলার একজন বন্ধু আছে, সে ইন্টারনেটে পড়েছে এইডস হলে নাকি ঘন ঘন পেট খারাপ হয়। তার যতবার ডাইরিয়া হয়, সে এইডস এর দুশ্চিন্তায় অস্থির হয়ে পড়ে।

আরেকজন আছে, তার মাথায় ঢুকেছে কিডনী রোগ। কোন নাটকে জানি দেখেছে কিডনী রোগে আক্রান্ত নায়কের পেটে ব্যথা। সে জন্য তিনি পেট ব্যথা হলেই হাসপাতালে গিয়ে কিডনী টেস্ট করেন।

অথচ সে বিড়ি ফুকে প্রতি ঘন্টায় দুটো। সেদিকে খেয়াল নেই।

অনেক অনেক উদাহরন আছে। বলে শেষ করা যাবে না।

স্বাস্থ্য সচেতনতা এক জিনিস,

এরকম আজাইরা রোগ দুশ্চিন্তা আরেক জিনিস।

সবার কাছে এত ভং চং লিখে এটাই বলতে চাই,

আপনার কোন রোগ হয়েছে সন্দেহ হলে দরকার হলে দশজন ডাক্তারের সাথে আলাপ করুন।

তাও রোগ নিয়ে ইন্টারনেটে পড়ে এমন বেহুদা দুশ্চিন্তা করবেন না।

রোগ সম্পর্কে ইন্টারনেটে জানুন, সমস্যা নেই। কিন্তু ইন্টারনেট ঘেটে নিজের রোগ নিজে ধরতে যাবেন না এবং ইন্টারনেট এ পড়ে নিজের চিকিৎসা নিজে করতে যাবেন না।


[Collected]

Post a Comment

Previous Post Next Post