জাস্ট ফ্রেন্ড ই কি সব?

 


মনটাও খারাপ হয়েছে, কষ্টও পেয়েছি!


যেই লোকটা স্পষ্ট বলে দিয়েছে যে, দুজনের Consent থাকলে ❝যে কেউ❞ শারীরিক সম্পর্ক করতে পারে এবং তখন সেটা নাকি পৃথিবীর সুন্দর কাজের একটি। যেই লোকটা কিনা চায় টিনএজ ছেলে মেয়েরা, তরুণ-তরুণীরা, ক্লাস ফ্রেন্ডরা, জাস্ট ফ্রেন্ডরা, অনলি ফ্রেন্ডরা একে অপরের সাথে রাতে ঘুমাতে পারবে। যেই লোকটা প্যারেন্টিং পরামর্শ দিতে গিয়ে মা-বাবাদেরকে পরামর্শ দেয় যে, তাদের ছেলে-মেয়ে সম্পর্কে কেউ কোনো অভিযোগ করলে সেটা যেনো বিন্দু মাত্র আমলে না নেয়। যেই লোকটা সমকামিতারও পক্ষে। সেই লোকটাই, জ্বী সেই লোকটাই যখন কিনা পোস্ট দেয় এটা বলে যে, বাংলাদেশ ধর্মপ্রাণ একটি দেশ হয়েও, ঢাকা শহর মসজিদের শহর হয়েও কেনো নারীদের নামাজের জায়গা অপ্রতুল? আমার অবাক লেগেছে আমার কিছু প্রিয় বুঝদার মুসলিম ভাই-বোনেরাও তার ঐ পোস্টে লাইক আর লাভ দিয়েছেন, অনেকেই তার কাছে কষ্টের কথাও লিখে এসেছেন! আফসোস, আপনারা একটু #প্রজ্ঞা খাটালেন না, একটু বোঝার চেষ্টা করলেন না লোকটা অন্য সময়গুলিতে কি বলে থাকে।


উনার বক্তব্য ও জীবনাদর্শ জেনেও যদি প্রশ্ন করেন, ❝কেনো শিবলী ভাই, উনার ঐ কথা কি মিথ্যা?❞ আমার জবাব হবে, উনার দিক থেকে হয়তো উনি মিথ্যা বলেন নাই কিন্তু তার চাইতেও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, উনার সম্পর্কে জেনেও, উনি কেনো মসজিদে মহিলাদের স্থান নিয়ে কথাটা বললেন - সেটা আপনারা চিন্তা করলেন না!


উনি মুসলিমদের একটা অবস্থা সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্য ছাড়াই খোঁচা মেরেছে, কোনো গঠনমূলক পরামর্শও দেয় নাই। আমি নিশ্চিত নই, উনি কি আদৌ উনার পরিবারের মহিলা সদস্যদের নিয়ে মাসজিদে গিয়ে গিয়ে নিজ অভিজ্ঞতা থেকে কথাটা বলেছেন কিনা। অথচ আমি ৩০ বছর ধরে ঢাকায় আছি, ২০ বছর ধরে পরিবার নিয়ে আছি, ১৫ বছর ধরে কন্যা সন্তানদের নিয়ে ঢাকার নানা স্থানে যাতায়াত করছি, আমার বক্তব্য, ১৫ বছর আগে ঢাকায় মহিলাদের সলাতের স্থানের তুলনায় বর্তমানে সেটা প্রচুর পরিমাণে বেড়েছে। এটা সত্য আমার সাথেও দু'একটা মসজিদে কথা কাটাকাটি হয়েছে। কিন্তু সঠিক জ্ঞানের প্রচারে এবং মহিলাদের উৎসাহে ক্রমে তারাও বদলাতে শুরু করেছে। বিগত ১৫ বছরে আমার পরিবারের কোনো নারী সদস্যের সলাত মিস যায়নি বাইরে থাকার কারণে। অধিকাংশ সলাত আমরা মাসজিদেই আদায় করেছি। এছাড়াও এখন বিভিন্ন অফিসে, ভবনে, হাসপাতালে, শপিং মলে, রেস্টুরেন্টে মেয়েদের সলাতের উত্তম আয়োজন খুব সহজেই পাওয়া যায়। এখন আমরা জুম্মা, তারাবী, ঈদের সলাতও পরিবারের নারীদের সাথে নিয়ে প্ল্যান করতে পারি, আদায়ও করতে পারি কোনো প্রকার #অস্বস্তিকর অবস্থা ছাড়াই, আল্‌হাম্‌দুলিল্লাহ্‌।


বরং এমনও হয়েছে যেখানে মহিলাদের সলাতের আলাদা স্থান ছিলোই না কিন্তু উনি যখন আমার মুখে শুনলেন আমার পরিবার ও কন্যারা সলাত আদায় করবে, উনার ব্যস্ততা দেখে আমিই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তখনও পুরুষরা মাসজিদের ভেতরে সলাত আদায় করছিলেন, উনি বাইরেই ফ্লোর পরিষ্কার করা শুরু করে দিলেন, জায়নামাজ আনার জন্য দৌড় দিলেন। আমিই বরং তাকে বলেছিলাম, ফ্লোর তো পরিষ্কার আর কিছুই লাগবে না এখানেই সলাত হবে। তবুও উনার ব্যস্ততা কমেনি।


হয়তো পজিটিভ কথা শুনে এখন বলবেন, ❝শুধু ঢাকায় সুযোগ সুবিধা বাড়লেই হবে?❞ তাহলে আমার গ্রামের কথাই বলি। সেখানেও মহিলারা মসজিদে সলাতে যায়, জুম্মা, তারাবী, ঈদের সলাতও আদায় করে। এমনকি ঢাকার বাইরে বা দেশের বাইরে মহিলাদের নিয়ে যাতায়াতেও সলাতের উত্তম স্থান পেয়েছি সর্বত্র, আলহামদুলিল্লাহ।


এই তো কিছুদিন আগেই ঢাকার একটা রেস্টুরেন্টে খাবার অর্ডার করে অপেক্ষায় ছিলাম। মাগরিবের সময় মেয়েদের সলাতের জায়গার কথা বলতেই তাদের ভিআইপি রুম আনলক করে দেয় (সলাতের নির্দিষ্ট স্থান ছিলো না)। আরেকদিন এক মহিলা তার দোকানেই আমার স্ত্রীর সলাতের ব্যবস্থা করে দেন দোকান বন্ধ করে, কাস্টমার ঢুকতে দেন নাই। এ থেকে বোঝা যায়, মানুষ জানছে, সচেতন হচ্ছে, সুযোগ পেলে সর্বোত্তমটাই করে। রাতারাতি তো আর পরিবর্তন হবে না, তাই না?


তাই আমি বলবো সাকিব বিন রসিদের মতো সমাজ বিধ্বংসী আদর্শ যারা এখনও প্রতিপালন ও প্রচার করে, সেই আদর্শ থেকে তারা ফিরে না আসার আগেই যদি তাদের মুখে ইসলাম নিয়ে কিছু শুনেন দয়া করে মুগ্ধ হবেন না, একটু বুঝে শুনে। ইতিহাস বলে, সমাজ বিধ্বংসী আদর্শ লালন-কারীরা মাঝে মাঝেই ইসলাম নিয়ে কিছু বলে নিজেদের ফায়দা আদায়ে। শুধু তাদের কথা শুনলেই হবে না, তাদের কাজটাও একটু দেখবেন। শুধু মেসেজ দেখলেই হবে না, মেসেঞ্জারকেও দেখবেন। তবে যদি অন্য কোনো কারণে তাদের ফ্যান হয়ে থাকেন, তাহলে আমার আর কিছুই বলার নাই।


মসজিদে মহিলাদের সলাত আদায় করা বিষয়ে যারা নানা মাধ্যমে অল্প অল্প করে কাজ করে যাচ্ছেন, তাদের কাজে যেনো আল্লাহ্‌ বারাকাহ্‌ বাড়িয়ে দেন এবং ইন্‌শাআল্লাহ্‌ ক্রমে আরো সহজ হয়ে যাবে। আমার পর্যবেক্ষণ বলে, নারী-পুরুষ সাধারণ মানুষ ইসলামের প্রতি আরো বেশি বেশি আকৃষ্ট হচ্ছে। নানাভাবে সেটা বোঝা যায়, মাসজিদে যাতায়াত বাড়লে আরো স্পষ্ট হবে একদিন, যাতায়াত বাড়ছেও। কিন্তু সেদিন সাকিবরা আফসোস করবে, কারণ সেদিন তাদের ❝Consent থাকলেই শারীরিক সম্পর্ক করতে পারার❞ আহ্বানে অধিকাংশরাই সাড়া দেবে না ইন্‌শাআল্লাহ্‌।


Writer: Shiblee Mehdi

Post a Comment

Previous Post Next Post