কেন ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন-ডি একসাথে খাওয়া হয়?



মানুষের অস্থিসন্ধিতে থাকে সাইনোভিয়াল ফ্লুইড (synovial fluid) নামে এক প্রকার পিচ্ছিল তরল। যার ফলে আমরা আমাদের হাত-পা ইত্যাদি নাড়াতে পারি। এই ফ্লুইড গ্রিজ হিসেবে কাজ করে। গ্রিজ যেমন কল-কব্জাকে সচল রাখে, তেমনি সাইনোভিয়াল ফ্লুইড দেহের অস্থিসন্ধিগুলোকে সচল রাখে। সমস্যাটা দেখা যায় যখন সাইনোভিয়াল ফ্লুইড শুকিয়ে যায়। এতে হাত-পা নাড়ানোর সময় মসৃণভাবে নাড়ানো যায় না। হাড়ে হাড়ে ঘষা খায়। এর ফলে সৃষ্টি হয় ব্যথার অনুভূতি। আর সাইনোভিয়াল ফ্লুইড শুকিয়ে যাওয়ার পেছনে কারণ সেই ক্যালসিয়ামের অভাব।


ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন-ডি যুগপৎ ভাবে কাজ করে। বলতে গেলে একে অপরের হাত ধরে চলে। দীর্ঘ সময় দেহে ক্যালসিয়ামের অভাব থাকলে হাড়ের বিভিন্ন প্রকার মারাত্মক রোগ হতে পারে। এর ভেতর অস্টিওপেনিয়া (osteopenia) এবং অস্টিওপোরোসিস (osteoporosis) উল্লেখযোগ্য।


যখন হাড়ে খনিজের ঘনত্ব (bone mineral density) কমে যায়, তখন অস্টিওপেনিয়া সৃষ্টি হয়। অনেক অস্টিওপেনিয়া রোগী পরবর্তী সময়ে অস্টিওপোরোসিসে ভোগেন সঠিক চিকিৎসা না করানোর কারণে। রক্তে ক্যালসিয়াম লেভেল প্রয়োজনীয় পরিমাণ না থাকলে হার্ট ও মাসল ইত্যাদি সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। এ সময় হাড় থেকে সঞ্চিত ক্যালসিয়াম রক্তে এসে অন্যান্য জৈবনিক কাজে ব্যবহার হয়। এতে করে হাড়ের ক্যালসিয়াম লেভেল কমে যায় এবং হাড়ের ঘনত্ব কমে যেতে থাকে। এই অবস্থাটাই হচ্ছে অস্টিওপেনিয়া।


অস্টিওপোরোসিস মানে হচ্ছে ছিদ্রযুক্ত হাড়। দীর্ঘ সময় অস্টিওপেনিয়ার চিকিৎসা না করলে তা এক সময় অস্টিওপোরোসিস-এ রূপান্তরিত হয়। অস্টিওপোরোসিস হলে হাড়ে সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম ছিদ্র তৈরি হয় এবং হাড় ক্ষয় হতে শুরু করে। সোজা কথায় ফোঁপড়া-হাড়। অস্টিওপোরোসিস হবার প্রধান স্থানগুলো হলো মেরুদণ্ড, কব্জি এবং নিতম্বের হাড়।


মানব দেহে ক্যালসিয়ামের প্রভাব অনেক। দাঁত ও হাড়ের গঠনের প্রধান উপাদান এটি। নিউরোমাসকুলার অ্যাক্টিভিটি, কার্ডিয়াক অ্যাক্টিভিটি বা হার্টের রক্ত সঞ্চালন ক্যালসিয়াম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। কোষ থেকে কোষে বিভিন্ন প্রকার খনিজ ও রাসায়নিক পদার্থ পরিবহনেও ক্যালসিয়াম সহায়তা করে। ক্যালসিয়ামের অভাবে আরও কিছু সমস্যা হয়। যেমন- কোষ ভেদ্যতা (cell permeability) বেড়ে যায়। এতে কোষ থেকে কোষে বিভিন্ন খনিজ ও ভিটামিন পরিবহন ব্যাহত হয়। রক্তচাপ কমে যায়। অর্থাৎ নিম্ন রক্তচাপ (hypotension) দেখা দেয়। ক্যালসিয়ামের অভাব বা শরীরের প্রয়োজনের তুলনায় ক্যালসিয়াম কম থাকা, একে বলা হয় হাইপোক্যালিমিয়া (hypocalemia)।


একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়ষ্ক মানুষের ক্যালসিয়াম RDA (required dietary allownce) হচ্ছে ১০ মি.গ্রা./দিন। শিশুদের জন্য এই পরিমাণ হচ্ছে ১৫ মিঃগ্রাঃ/দিন এবং টিনএজারদের জন্য তা হচ্ছে ১৮ মিঃগ্রাঃ/দিন। ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে দুধ, পনির, ডিম, গাজর, মাশরুম, সবুজ শাক-সব্জি।


ক্যালসিয়ামের অভাবে আমাদের দেহে নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়। তাই বলে অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণ করা যাবে না। দেহে অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম থাকলে সৃষ্টি হবে হাইপারক্যালিমিয়া (hypercalemia)। যা তৈরি করবে আরও নানা প্রকার সমস্যা। এতে রক্তচাপ বেড়ে যায় এবং সৃষ্টি হয় হাইপোর্টেনশন (hypertension), যাকে আমরা বলি হাই ব্লাড প্রেসার। এ ছাড়াও হার্টের ভারসাম্য নষ্ট হওয়া, ক্ষুধামন্দা, পেটের ব্যাথা, পেটের গোলযোগ এবং কোষ্ঠ কাঠিন্যের জন্যেও অধিক ক্যালসিয়াম দায়ী। আমরা যে সকল খাবার খাই তাতে হাইপারক্যালিমিয়া (hypercalemia) হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তবে ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট নেয়ার ক্ষেত্রে একটু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

Post a Comment

Previous Post Next Post