রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়াতে আক্রান্ত এদেশের বেশিরভাগ মানুষ ভোগেন শরীরে লোহার অভাবঘটিত ‘আয়রন ডেফিসিয়েন্সি অ্যানিমিয়া'য়।
এর চিকিৎসা বলতে খাবারদাবারের মাধ্যমে শরীরে লোহা বা আয়রনের প্রবেশ বাড়ানো।
সবুজ সব ধরনের শাকপাতা, থোড়, বাদাম, ডাল, মাছ, মাংস, ডিম এরকম খাবারদাবারে লোহা রয়েছে যথেষ্ট মাত্রায়। এখান থেকেই এসেছে শাকপাতা খেয়ে অ্যানিমিয়া সারানোর জনপ্রিয় ধারণা। ধারণাটা একশোভাগ ভুল, কেন তা পরে বলছি।
দেখা গেছে, ডাল বা অঙ্কুরিত ছোলা, বাদাম ইত্যাদির আয়রন শরীরে কাজে লাগে ভাল। শরীরে সবচাইতে ভাল কাজে লাগে মাছ, মাংস, ডিমের প্রাণীজ আয়রন। নিয়মিত খানিকটা প্রাণীজ প্রোটিন খাওয়া শরীরে যথেষ্ট আয়রন ঢোকানোর সবচাইতে কার্যকরী উপায়। এগুলো নিয়মিত খেলে কারও শরীরে অ্যানিমিয়া হবার কথা নয়। যদি না পেটের অসুখ , কৃমি/ হুকওয়ার্ম বা অন্য কারণে একটানা রক্তক্ষয়ের ফলে শরীরে লোহার অভাব দেখা দেয়।
অ্যানিমিয়ার চিকিৎসা বলতে শুধু প্রাণীজ প্রোটিন বেশি খাওয়া নয়, পাশাপাশি ওষুধ খেয়ে পেট থেকে হুকওয়ার্ম নির্মূল করা। হুকওয়ার্ম যাতে আর শরীরে ঢুকতে না - পারে তা নিশ্চিত করতে ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। পেটের অসুখের চিকিৎসা করা, যোগ্য চিকিৎসকের সাহায্য নিয়ে শরীর থেকে নিয়মিত অস্বাভাবিক রক্তক্ষয় আটকানো। প্রয়োজনে পাশাপাশি ওষুধ হিসেবে নিয়মিত আয়রন ট্যাবলেট/ক্যাপসুল/সিরাপ খাওয়া।
কুলেখাড়া, শাকপাতা, থোড় বা থোড়ের রস খেয়ে অ্যানিমিয়া সারানোর নির্ভেজাল কল্পনাবিলাসে ভোগেন এদেশের বহু শিক্ষিত মানুষ। অনেকে বিশ্বাস করেন , নিয়মিত সবুজ শাকপাতা খেলে শরীরে যথেষ্ট লোহা ঢুকে কমবে অ্যানিমিয়ার উপসর্গ। বাস্তবে, অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে বা এর চিকিৎসায় শাকপাতা বা থোড়ের মতো উদ্ভিজ আয়রন আদৌ কার্যকরী নয়। থোড় বা শাকপাতায় যথেষ্ট লোহা যে থাকে এতে কোনো ভুল নেই। তবে শাকপাতা আমরা শুধু খাই না, খাই ভাত বা রুটির সঙ্গে। তাই শাকপাতার আয়রন ভাতরুটির অক্সালেট বা ফাইটেটের সঙ্গে মিশে তৈরি হয় আয়রনের অক্সালেট বা ফাইটেট যৌগ। একইভাবে ডায়েটারি ফাইবার বা খাদ্যতন্তুর কার্বনেটের সঙ্গে মিশে তৈরি হয় লোহার কার্বনেট যৌগ।
লোহার কার্বনেট, অক্সালেট বা ফাইটেট যৌগ অন্ত্র থেকে শরীরে যেতে পারে না, মলের সঙ্গে বেরিয়ে যায় শরীর থেকে।
কুলেখাড়ার রস, থোড় বা সবুজ শাকপাতা খেয়ে অ্যানিমিয়া সারানোর ধারণা তাই শুধু ভুল নয়, একশোভাগ ভুল। ধারণাটা সত্যি হলে পেট ভরাতে গাদাগুচ্ছের শাকপাতা খেয়ে থাকা গরিবমানুষগুলো এত বেশি আক্রান্ত হতেন না অ্যানিমিয়ায়। টকটকে লালের বদলে এত বেশি ফ্যাকাশে হত না এদের শরীরের রক্ত।
তবে অঙ্কুরিত ছোলা , শুকনো বাদাম বা মাছ ,মাংস, ডিম নিয়মিত খেলে শরীরে যথেষ্ট আয়র ঢুকে কাজ হয় অ্যানিমিয়ায়, যদি না পেটে থাকে হুকওয়ার্ম অথবা লোহা শোষণে ব্যাঘাত ঘটায় এমন কোনো অসুখ যদি না শরীর থেকে নিয়মিত রক্তক্ষরণে (যেমন অতিরিক্ত ঋতুস্রাব, অর্শ থেকে রক্তপাত ইত্যাদি ) বেরিয়ে যায় লোহা।
লেখক: ডা. মোঃ ফাইজুল হক
Post a Comment