কৃমি হওয়ার কারণ ও কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম



জেনে অবাক হবেন যে একটি কৃমি মানুষের অন্ত্র থেকে দিনে ০.২ মিলিলিটার রক্ত শুষে খায়।


অনেকগুলো কৃমি শরীরে থাকলে প্রতিদিনই বেশ কিছু পরিমাণ রক্ত হারিয়ে যায়। ফলে আমরা অপুষ্টি ও রক্তশূন্যতায় ভোগি ছোট বড় সবাই।


এছাড়াও কৃমির কারণে অ্যালার্জি, ত্বকে চুলকানি, শুকনো কাশি, শ্বাসকষ্ট হতে পারে, কারো আবার কৃমির জন্য রাতে ঠিকমতো ঘুমও হয় না।


কখনো অন্ত্রের বা পিত্তথলির নালিতে কৃমি আটকে গিয়ে বড় ধরনের জটিলতা হয়। কৃমির সংক্রমণে হতে পারে বড় ধরনের স্বাস্থ্যসমস্যা এবং অপারেশনের কারণ।


কৃমি দূর করতে হলে প্রথমেই জানা দরকার এটি কেন হয়?

নোংরা পরিবেশ, অনিরাপদ পানি পান, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, খালি পায়ে হাঁটা কৃমি সংক্রমণের জন্য দায়ী।

কৃমি ঔষুধের মাধ্যমে দূর করার উপায় আছে। কিন্তু অনেকে নানা ভুল ধারণার জন্য ভয়ে কৃমির ঔষুধ খান না।শিশুদেরকেও খাওয়াতে চান না। কিন্তু ঔষুধ নিয়ম মেনে খেলে আর সহজ কিছু উপায় মেনে চললে সহজেই কৃমি দূর করা যায়।


জেনে নেওয়া যাক সহজ কিছু উপায়:

১. প্রতি তিন মাস পরপর পরিবারের সবাই কৃমিনাশক টেবলেট সেবন করতে পারেন। কৃমিনাশক ট্যাবলেটের প্রকারভেদে ডোজ ও ভিন্নরকম হয়। শিশুদেরও একইভাবে সিরাপ খাওয়াতে হবে। দুই বছরের নিচে কোনো শিশুকে খাওয়াতে হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হয়। বয়স ১বছরের কম হলে ক্রিমির ঔষধ খাওয়াতে হয়না।


২. চিনি খেলে বা মিষ্টি খেলে কৃমি হবে বলে যে ধারণা প্রচলিত, তা ঠিক নয়। মিষ্টি বা চিনি খাওয়ার সঙ্গে কৃমির কোনো সম্পর্ক নেই। বরং নোংরা হাতে বা অস্বাস্থ্যকর খাবার খেলে কৃমি হবে।


৩. কৃমি হলে পায়ুপথ চুলকায় বলে সেখানে হাত দেয়।পরে আবার সেই হাত মুখে দেয়।এভাবেই সংক্রমণ ছড়াতে থাকে। তবে পায়ুপথ চুলকানো মানেই কৃমি সংক্রমণ নাও হতে পারে। কৃমি সংক্রমণের আরও উপসর্গ আছে। যেমন: ওজন না বাড়া, পেট ফাঁপা, পেট কামড়ানো, আমাশয়, অপুষ্টি, রক্তশূন্যতা ইত্যাদি।


৪. গরমকালে কৃমিনাশক খাওয়া যাবে না এমন ধারণারও কোনো ভিত্তি নেই। গরম, শীত, বর্ষা যেকোনো সময়ই কৃমিনাশক খাওয়া যাবে। তবে খাওয়ার পর বা ভরা পেটে খাওয়া ভালো।


৫. কৃমিনাশক নিরাপদ ঔষুধ। এর তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। তবে কারও কারও পেট ফাঁপা বা বমি ভাব হতে পারে। অনেক সময় কৃমিনাশক খেয়ে শিশুদের অসুস্থ হওয়ার যে খবর পাওয়া যায়, তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অজ্ঞতা ও কুসংস্কারজনিত।


৬. পানি অবশ্যই ফুটিয়ে বা বিশুদ্ধ করে পান করবেন। শাকসবজি ও মাংস খাওয়ার আগে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। খাবার প্রস্তুত ও পরিবেশনের আগে ভালো করে হাত ধুতে হবে। শিশুদের খাওয়ার আগে ও শৌচাগার ব্যবহারের পর হাত ও পানিরটেব সাবান দিয়ে কীভাবে ভালো করে হাত কচলে ধুতে হয়, তা শেখানো জরুরি।


৭. বাইরের খোলা অপরিচ্ছন্ন খাবার না খাওয়াই ভালো। মাঠঘাটে শিশুদের খালি পায়ে খেলতে দেবেন না।


৮. কেবল গ্রামে বা রাস্তায় থাকা শিশুদের কৃমি হয়—এই ধারণাও ভুল। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যে-কারও কৃমি সংক্রমণ হতে পারে। কুকুর,গরু,ছাগল ভেড়া, পাখি,হাঁস,মুরগি,ফলমুল, বিভিন্ন খাবার,ইত্যাদির মাধ্যমে কৃমি ছড়িয়ে পড়ে।


তাই অপুষ্টি এড়াতে নিয়মিত কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়াই ভালো এবং তিন মাস পরপর পরিবারের সবাইকে একসাথে কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়ানো উচিত।

Post a Comment

Previous Post Next Post