বাচ্চা কম খাচ্ছে, খিদে হচ্ছে না বাচ্চার, এমন অনুযোগ নিয়ে চেম্বারে হাজির হন বাচ্চার মা। এদের জন্য কোনো ওষুধ না লাগলেও শুধুমাত্র মন রক্ষার জন্য কোনো এপিটাইজার গ্রুপের ঔষধ দিয়ে দিতে হয়। অথবা অনেক সময় ফাইটম। এটা আগে খুব ছিলো বাচ্চাদের ক্ষুধা বাড়ানোর বিষয়টা। এখন বাচ্চাদের সাথে বাচ্চাদের মা বাবারাও আসে ক্ষুধা বাড়ানোর জন্য।
যখন রোগীকে বলি, "ক্ষিদে পাওয়া এমন এক শরীরবৃত্তীক প্রক্রিয়া, যা বাড়াতে কোনও ওষুধ লাগেনা। খিদে বাড়ানোর কোনো ওষুধের কথা চিকিৎসা বিজ্ঞানের কোনও প্রামান্য বইয়ে নাই। এলোপ্যাথিক, হোমিওপ্যাথিক, ইউনানী, আয়ুরবেদিক কোন পদ্ধতিতে এমন কোনো মেডিসিন নাই যেটা আপনাকে রাক্ষস বানিয়ে দেবে আর আপনি সব খেয়ে ফেলবেন।"
তখন রোগী চিন্তা করে আমি ভালো ডাক্তার নই, আমি কিছুই জানিনা।
পাশের ডাক্তার (ডিগ্রী থাক বা না থাক এসব রোগীরা চিন্তা করেনা) কোপা সামসু বড় বড় বোতল বিক্রি করে যা খাইলেই প্রথম দিন থেকে ক্ষুধা বেড়ে যায়।
আর, আমি বলি এসব ঠিক না। এসব ভালো না। এসব দরকার নাই। সাধারনভাবে রোগীদের কাছে আমি অজ্ঞ ডাক্তার। এটা যে অশিক্ষিত রোগীদের কথা তা নয় শিক্ষিত রোগীরাও এমন আচরন করে। অনেক রোগীদের কাছে সত্যি কথার দাম নাই।
আসেন এবার ক্ষুধাবর্ধক ওষুধের কিছু হাকিকত পেশ করি – এসব ওষুধ বেশিরভাগ ইউনানী, আয়ুর্বেদিক ও হোমিওপ্যাথিক নামের কিছু অখ্যাত কোম্পানি বানায় যা পাওয়া যায় এলোপ্যাথিক দোকানে ইদানিং টাকার লোভে হোমিও ডাক্তাররাও এসব রাখছে। আর কিছু নাম না জানা মির্ডফোর্ড কেন্দ্রিক এলোপ্যাথিক কোম্পানিরা বানায়।
এসব ঔষধের মূল উপাদান হলো “সাইপ্রোহেপটাডিন” এবং কিছু স্ট্রেরায়ডের (যেমনঃ ডেক্সামেথাসন) কম্ভিনেশন !!! এলোপ্যাথিক, ইউনানী , আয়ুর্বেদিক নাম যাই হোক উপাধান একই !! এটা হচ্ছে এদের গোপন ফর্মূলা। কোনো বই পুস্তকে, কোনো ফার্মাকোপিয়ায় এ ফর্মূলা নাই। কোনো অনুমোধনও নাই এসব খিচুরি বানানোর।
এই খিছুরি মার্কা ওষুধ খাওয়ার পর প্রথমদিন থেকেই প্রচুর ক্ষুধা বাড়ে রোগীর স্বাস্থ্য ভালো হতে থাকে, মুখ ফুলে যায়, পেট ফুলে যায়। রোগী মনে করে তার স্বাস্থ্যের উন্নতি হচ্ছে। আস্থে আস্থে আবার স্থাস্থ্য কমতে থাকে ও খারাপ প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। শরিরে পানি জমে যায়, মুখে ব্রন ওঠে, ফুসফুসে পানি জমে, কিডনির নেফ্রন কাজ করেনা, নেফ্রাইটিস হয়, ফলাফল কিডনি নস্ট, হয়ে কয়েকদিন অসুস্থ থাকার পর মারা যায়।
এগুলো গল্প না, বা কথার কথা নয়। আমার নিজের দেখা বাস্তব অভিজ্ঞতা। এসব রোগীদের চেহারা দেখলেই আমি বলেদিতে পারি এরা কি খাচ্ছে।
সরকারের ড্রাগ প্রশাসন এসব জানে , কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সিলগালাও হয়েছে । কিছু ঔষধ নিষিদ্ধ ও হয়েছে , এর পরেও নিষিদ্ধ হয়নি এমন অনেক মোটা হওয়ার ঔষধ নামের বিষ এখোনো বাজারে আছে ।
আজ থেকে নিজে সতর্ক হোন অন্যকে সতর্ক করুন ।
এলাকার কোনো ফার্মেসিতে দেখলে তাদের এগুলো বিক্রি করতে নিষেধ করুন , সমাজকে , প্রজন্মকে ধ্বংস করে দিচ্ছে এরা ।
সিরাপের সাথে সাথে ট্যাবলেট ,ক্যাপসুল, পাউডার , মিল্ক শেক এবং হালুয়াও বের হয়েছে মোটা করার জন্য ।
সবচেয়ে ভয়ানক তথ্য হলো , বাচ্চাদের জন্য এসব এখন ড্রপ আকারেও বের হয়েছে । কয়েকটি কোম্পানির " বাচ্চাদের ড্রপ " বাজারে পাওয়া যায় ।
যারা মোটা হতে চান, তাদের একমাত্র উপায় হচ্ছে ক্ষুধাবর্ধক এসব স্বাস্থ্য ভালো করার ঔষধ থেকে দূরে থাকা। হজমের সমস্যা থাকলে তার চিকিৎসা করুন, সমস্যা না থাকলে প্রচুর শাক, সবজী, ফল, মাছ মাংশ/গোস্ত, ডিম, দুধ খান। এতেই পুষ্টি পাবেন, সু স্বাস্থ্য পাবেন, ভালো থাকবেন।
মনে রাখবেন মোটা হওয়া মানে স্বাস্থ্য না সুস্থতার নামই স্বাস্থ্য।
(এটা অনেক আগের লেখা, নতুন করে আবার দেওয়া হল )
লেখক: ডা: মোঃ ফাইজুল হক
Post a Comment