পোড়া রোগীর ব্যাপারে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

পোড়া রোগীর ব্যাপারটা অদ্ভুত।
ভাইটাল অর্গান বা জীবনের জন্য আবশ্যিক অঙ্গ হিসেবে চামড়াকে বিবেচনা করা হয়না। ব্রেইন, হার্ট, ফুসফুস, লিভার, কিডনি এগুলো হল ভাইটাল অর্গান। এগুলো ছাড়া মানুষ বাঁচেনা।

এখন একটা মানুষের শুধু চামড়া পুড়ে গেল। ভাইটাল অর্গান সব ঠিক আছে। তারপরেও আগেভাগেই তার মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে দেয়া হতে পারে।

আমার এক আত্মীয়া আগুনে পুড়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেন। চামড়ার কতোটুকু এলাকা পুড়েছে এবং কতো গভীর হয়ে পুড়েছে - এই দুটো জিনিস ডাক্তার দেখলেন। দেখতে দুই-তিন মিনিট লাগে।

"রুল অফ নাইন" বলে একটা সিস্টেম আছে। রোগীর দিকে একবার তাকিয়েই মনে মনে হিসাব করে ফেলা যায় কতো পারসেন্ট বার্ন হয়েছে। সময় লাগে এক মিনিট। আর একটু কাছে থেকে দেখতে হয় পোড়ার গভীরতা বোঝার জন্য। ফার্স্ট ডিগ্রি, সেকেন্ড ডিগ্রি, নাকি থার্ড ডিগ্রি।

তো ডাক্তার দুই-তিন মিনিট রোগীর দিকে তাকালেন। তারপর আমার কাছে এসে বললেন, চিকিৎসা যা লাগবে দিয়ে দিচ্ছি। তবে এই রোগী বাঁচবেনা।

সাধারণ মানুষের জন্য ব্যাপারটা হজম করা কষ্টকর। একটা মানুষের দিব্যি জ্ঞান আছে, কথাবার্তা বলছে, ব্যথাও খুব বেশি নেই, কিন্তু তার মৃত্যু পরোয়ানা জারি হয়ে গেছে। পৃথিবীর কোথাও নিয়ে তাকে আর বাঁচানো যাবেনা। চামড়া এতোই গুরুত্বপূর্ণ! চামড়াও একটা ভাইটাল অর্গান।

ষাট-সত্তর পারসেন্ট বার্ন হয়ে গেলে মানুষকে বাঁচানো কঠিন হয়ে যায়। সাথে গভীরতা যদি থার্ড ডিগ্রি হয়, তাহলে পঞ্চাশ পারসেন্ট হলেই বাঁচানো মুশকিল। সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ইংল্যান্ড, অ্যামেরিকা, জাপান যেখানেই নেন, আর লাভ নাই। এ অবস্থায় রোগীর চিকিৎসা শুধু কষ্ট কমানোর চিকিৎসা। এ জগত থেকে ও জগতে ট্রানজিশনটা সহজ করার চিকিৎসা।

আমার ঐ আত্মীয়া কয়েকদিন পর মারা গেলেন। যে কয়েকবার ওনার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম, বারবার একটা কথাই মনে হচ্ছিল- হুকুম হয়ে গেছে, এখন শুধু তামিলের অপেক্ষা।
ওনার স্বজনরা অবশ্য তখনো আশা করে আছে। চিকিৎসা করলে আস্তে আস্তে ভালো হবে। কারণ, ওনারা মেডিকেল নলেজে লেম্যান।

যেমন আমরা সবাই জীবনের নলেজে লেম্যান। আমাদেরও অনেকের হুকুম হয়ে গেছে, শুধু তামিলের অপেক্ষা। এরপরেও বড় বড় আশা করে বসে আছি।


লিখেছেন- ডা. কায়সার আনাম

Post a Comment

Previous Post Next Post