নারী দিবসে এটাই কাম্য



একবার এক মেয়ে এসেছিল চিকিৎসা নিতে। দেরী করে ভাত রান্না করায় স্বামী মেরেছিল।

সাধারণত বেশিরভাগ মারামারির রুগী হাসপাতালে আসে মামলা করার জন্য। তাই জিজ্ঞাসা করেছিলাম, মামলা করবে কি না?

এরপর উনার যে উত্তর ছিল, তা চমকে যাওয়ার মত।

"না স্যার। উনি এমনিতে ভাল মানুষ। খালি রাগটা একটু বেশি। আপনি ওষুধ দেন শুধু"।

আরেকবার রোড এক্সিডেন্ট হয়েছিল। আহতদের মধ্যে ছিল এক দম্পতি। স্বামী একটু বেশি আহত, স্ত্রী কম। স্বামীকে হাসপাতালে ভর্তি করে মহিলাটিকে শুধু প্রেসক্রিপশন লিখে দিলাম।

প্রেসক্রিপশন লেখার সময় হঠাৎ মহিলাটি জিজ্ঞাসা করল,

"স্যার, কি কি ওষুধ দিচ্ছেন আমাকে?"

বললাম, "এন্টিবায়োটিক, ব্যথার ওষুধ, আর একটি ঘুমের ওষুধ"।

শুনে সাথে সাথে বলে উঠলেন,

- না, না, ঘুমের ওষুধ দিয়েন না। আমার ঘুম দরকার নাই।

- কেন? ব্যাথার কারণে রাতে ঘুম ভাল হবেনা।

- না, তবুও দিয়েন না।

এরপর কোলের বাচ্চাকে দেখিয়ে বলল,

- আমি ঘুমালে রাতে ওর বাপের সেবা করবে কে?

বছর দুয়েক আগের ঘটনা। লেবার পেইন শুরু হওয়াতে হাসপাতালে এসেছে নরমাল ডেলিভারি হওয়ানোর জন্য এক মেয়ে। কিছু সমস্যা থাকায় ডেলিভারির সময় নার্স বলল, স্যার আপনি একটু পাশে থাকেন।

ডেলিভারির সময় মা ব্যাথায় কাতরাচ্ছিল।

কিন্তু বাচ্চা হওয়ার পর যখন তাকে বাচ্চার মুখ দেখানো হল, বিধ্বস্ত মুখে তিনি যে হাসি দিচ্ছিলেন, মনে হচ্ছিল পৃথিবীতে তার চেয়ে সুখী ব্যক্তি আর কেউ নেই।

সে বছরেরই শীতের সময়ের ঘটনা।

রাতের বেলা ওয়ার্ডে ডাকলো জরুরী ভিত্তিতে। চিকিৎসা দিয়ে আসার সময় দেখি এক মহিলা ফ্লোরে শুয়ে আছে, শীতে কাঁপছে।

তার গায়ে পাতলা চাদর দেখে একটু অবাক হলাম। কারণ সন্ধ্যার রাউন্ডেই যাওয়ার সময়েই দেখেছিলাম তার গায়ে কাঁথা।

এরপর পাশে তাকিয়ে দেখি সেই কাঁথাটি তার বাচ্চার গায়ের উপর দিয়ে রেখেছে, বাচ্চা আরামে ঘুমাচ্ছে, আর মহিলাটি হালকা কাঁপছে।

পরে নিজেদের অতিরিক্ত কম্বলটা মহিলাকে দেওয়ার ব্যবস্থা করার পর তার শীত কিছুটা কমল।

এভাবে লিখলে কখনোই শেষ হবে না।

মেয়েদের এই গুণটা সত্যি অনেক চমৎকার। তারা প্রয়োজনে প্রিয়জনদের জন্য সবকিছুই উৎসর্গ করে দিতে পারে, যেকোনো সময়, যেকোনো মুহুর্তে।

সারাদিন কষ্ট করে রান্নাবান্না করে স্বামী-সন্তানের ক্ষুধা দূর করার মধ্যেই তারা শান্তি খুঁজে পায়, সারাদিনের কষ্টের কথা ভুলে যায়। নিজেদের মা'র দিকে তাকালেই সেটা খুব ভালোভাবে বুঝা যায়।

আমরা ছেলেরা সত্যি ভাগ্যবান একজন নারীকে মা হিসেবে পেয়ে, একজন নারীকে স্ত্রী হিসেবে পেয়ে, একজন নারীকে বোন হিসেবে পেয়ে, একজন নারীকে মেয়ে হিসেবে পেয়ে।

আসলে নারীদেরকে নারী হিসেবে নয়, একজন মানুষ হিসেবে, বন্ধু হিসেবে, মা হিসেবে, বোন হিসেবে, সহধর্মী হিসেবে দেখলেই আমাদের চিন্তাভাবনার অনেক পরিবর্তন আসবে। নারী দিবসে এটাই কাম্য।

এটা মনে রাখা উচিত WOMAN অর্থই হল-

W= Wonderful Mother

O= Outstanding Friend

M= Marvelous Daughter

A= Adorable Sister

N= Nicest Gift to Men from Allah


-[ডা.তারাকি হাসান মেহেদী]

Post a Comment

Previous Post Next Post