সুস্থ বাচ্চা আল্লাহতা'লার নেয়ামত



ঢাকা শিশু হাসপাতালে জয়েন করেছি মাত্র পাঁচ দিন হলো।  এখানে আসার আগে যদিও কিছুসংখ্যক ইগ্নোরেন্ট মানুষ বলেছিলো এদেশে পেডিয়াট্রিক সার্জারিতে নাকি কেইসই নাই..খালি নাকি মুসলমানি, এপেন্ডিসাইটিস আর অবস্ট্রাকশন এরমত পেটের দুই - একটা সমস্যার রোগিতেই ভর্তি। কিন্ত এই কয়দিনে আমি উপরোক্ত রোগগুলো খুব কমই দেখেছি ।বেশিরভাগই দেখেছি এমন এমন রোগ.. একটা থেকে আরেকটা আলাদা.. অনেকগুলির হয়তো নামই আগে শুনিনি । কোন বাবুর পেটের ভিতরে নাড়িভুঁড়ি প্যাঁচ খেয়ে পায়খানা আটকে গেছে.. আবার কোন বাবুর জন্মগতভাবে পায়খানার রাস্তা তৈরিই হয়নি.. কারো আবার পেটের ভিতরের নাড়ি ছোট্ট কোন ফুঁটো দিয়ে বুকের ভিতরে ঢুকে পুরো হৃৎপিন্ডকে অন্যপাশে সরিয়ে দিয়েছে । কোন বাবুর মাথায় পানি জমে মাথা ফুলে বিশাল ফুটবল হয়ে আছে, মাথার ভাড়ে সে ঠিকমত নড়তে চড়তে পারেনা.. আবার কোন বাবুর হাত-পা বাঁকা, কিংবা হাতপায়ের কিছু একটা কমবেশি আছে। 


এসব বাচ্চাগুলোকে দেখলে বুকের ভিতরটা খাঁ খাঁ করে উঠে.. দৌড়াদৌড়ি করে সারা এলাকা মাতিয়ে বেরানোর বয়সে এরা হাসপাতালের বেডে অসহায় হয়ে শুয়ে আছে.. অনেকে আবার এখনও কথা বলাই শুরু করেনি.. তার আগেই মুখে পরতে হয়েছে অক্সিজেন মাস্ক। যেহাতে  পেন্সিল কলম ধরে হাতের কাছে যা পাবে তাতেই ইচ্ছামত আঁকিবুকি করার কথা ছিলো সেহাতে পরে আছে ক্যানুলা.. দিনরাত সেহাতে ফুটে চলেছে বিশাল আকারের সুঁই। সবচেয়ে কষ্টের ব্যাপার হলো এদের অনেকেরই শেষ আউটকাম ভালোনা। অনেকেই চিকিৎসা নিচ্ছে শুধুমাত্র কয়েকটাদিন বেশি বেচেঁ থাকার জন্য। তাদের মা-বাবারা এটা খুব ভালো করেই জানেন.. তাও একটুখানি আশায় বুক বেঁধে নিজেদের সবকিছু ফেলে হাসপাতালে পরে আছেন দিনের পর দিন। 


এরপরেও যখন কিছু মানুষ তার বাচ্চা কালো কেন.. কেন বেশি সাদা.. কেন মেয়ে হলো.. কেন ছেলে হয়না.. কেন নাক বোঁচা.. কেন চুল কম.. কেন গায়ে দাগ.. কেন চোখ ছোট.. কেন হাইট কম.. কেন বাচ্চা কাঁদেনা.. কেন বাচ্চা বেশি কাঁদে...কেন বাচ্চা এত দুষ্ট.. ইত্যাদি নিয়ে হা হুতাশ করে তখন আমার খুবই অবাক লাগে.. ইচ্ছা করে একদিন তাদের নিয়ে কোন একটা ওয়ার্ডে দশ মিনিট একটু ঘুরিয়ে আনি। হয়তো তাহলে তারা বুঝতো যে শুধুমাত্র একটা সুস্থ বাচ্চা হওয়াই আল্লাহতা'লার কত্ত বড় একটা নেয়ামত। হাসপাতালে বাচ্চাকে নিয়ে নিয়তির বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে  যাওয়া এসকল বাবা-মায়েদের দেখলে হয়তো তারা বুঝতে পারতো যে তারা এবং তাদের সুস্থ সন্তানেরা আসলে কতটা ভাগ্যবান.. সবাই সে ভাগ্য নিয়ে জন্মায় না। 


Writer: Dr.Mahira Murshid

Post a Comment

Previous Post Next Post