বদনজর ও ঈর্ষা থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়


বদনজর ঈর্ষাকাতর ব্যক্তির অন্তর থেকে তীরের মতো বের হয়। কখনও সেই তীর লক্ষ্যভেদ করে, কখনও লক্ষ্যচ্যুত হয়। বস্তুবাদী দুনিয়ার রঙিন চশমা আর বিজ্ঞানের উপর ঈমান, অনেক সময় বদনজরের মতো এই ভয়াবহ বিষয়কে আমরা অস্বীকার করি, হালকা মনে করে উড়িয়ে দিই। অথচ নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে বারবার বদনজরের ব্যাপারে সাবধান করেছেন।


জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:


"বদ নজর মানুষকে কবর পর্যন্ত পৌছে দেয় এবং উটকে পাতিলে।" (সহীহ আল জামে : ১২৪৯, শাইখ আলবানি সহীহ বলেছেন)


অর্থাৎ মানুষের বদনজর কেউ মৃত্যুবরণ করে, যার ফলে তাকে কবরে দাফন করা হয়। আর উটকে যখন বদ নজর লাগে তখন তা মৃত্যু পর্যায়ে পৌছে যায় তখন সেটা যবাই করে পাতিলে পাকানো হয়।


জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:


"আমার উম্মতের মধ্যে তাকদীরের মৃত্যুর পর সর্বাধিক মৃত্যু বদ নজর লাগার দ্বারা হবে।" (মুসনাদ আবু দাউদ আল তায়ালিসি : ১৮৬৮, শাইখ আলবানি হাসান বলেছেন)


কিন্তু কীভাবে এই বদনজর থেকে নিজেকে আর পরিবারকে বাঁচানো যায়?


১। সূরাহ বাকারার শেষ দুই আয়াত


আবু মাসউদ আল আনসারি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,


"যে ব্যাক্তি সূরাহ্ আল বাকারার শেষের আয়াত দু’টি পড়বে তা সে রাতে ঐ ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট হবে।" (সহিহ মুসলিম : ৮০৭)


২। সূরাহ ইখলাছ, ফালাক্ব ও নাস


আবদুল্লাহ ইবনু খুবাইব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,


"তুমি প্রতি দিন বিকালে ও সকালে উপনীত হয়ে তিনবার করে সূরাহ ক্বুল হুআল্লাহু আহাদ (সূরাহ ইখলাস) ও আল –মুআওবিযাতাইন (সূরাহ ফালাক্ব ও সূরাহ নাস) পাঠ করবে, আর তা প্রত্যেকটি ব্যাপারে তোমার জন্য যথেষ্ট হবে।" (তিরমিযি : ৩৫৭৫)


৩। দুআ


উসমান ইবনু আফ্‌ফান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :


প্রতিদিন ভোরে ও প্রতি রাতের সন্ধ্যায় যে কোনো বান্দা এ দু‘আটি তিনবার পাঠ করবে কোন কিছুই তার অনিষ্ট করতে পারবে না :


بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الأَرْضِ وَلاَ فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ


(অর্থ : “আল্লাহ তাআলার নামে” যাঁর নামের বারাকাতে আকাশ ও মাটির কোনো কিছুই কোনো অনিষ্ট করতে পারে না। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী।”)


আবান রহিমাহুল্লাহ-এর শরীরের একাংশ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল। (উক্ত হাদিস রিওয়ায়াতকালে) এক লোক (অধঃস্তন বর্ণনাকারী) তাঁর দিকে তাকাতে থাকলে তিনি তাকে বলেন, তুমি কি প্রত্যক্ষ করছো? শোন! আমি তোমার কাছে যে হাদিস রিওয়ায়াত করেছি তা অবিকল বর্ণনা করেছি। তবে আমি যেদিন পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়েছি ঐ দুআটি পাঠ করিনি এবং আল্লাহ তাআলা ভাগ্যের লিখন আমার উপর কার্যকর করেছেন।


(তিরমিযি : ৩৩৮৮)


৪। ইবরাহিম আলাইহিসসালাম এর দুআ


ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাসান ও হুসাইন কে ঝাড়ফুঁক করে বলতেন,


أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لاَمَّةٍ


অর্থ : (আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কল্যাণময় বাক্যাবলির ওয়াসীলায় প্রতিটি শয়তান, প্রাণনাশী বিষাক্ত জীব ও অনিষ্টকারী বদনজর থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি)।


নবিজি বলতেন, আমাদের পিতা ইসমাইল আলাইহিসসালামও ইয়াকুব আলাইহিসসালাম কে এই দুআ পড়ে ঝাড়ফুঁক করতেন অথবা রাবী বলেছেন, ইসমাইল ও ইয়াকুব-কে ঝাড়ফুঁক করতেন।


(সহিহ বুখারি : ৩১২০)


Source: সীরাত পাবলিকেশন

Post a Comment

Previous Post Next Post