পা ফুলে যাওয়া বা Leg Oedema



পা ফুলে যাওয়ার কারণ ও প্রতিকার

পায়ের পাতা, গোড়ালি এবং পায়ে অতিরিক্ত পানি জমে ফুলে যেতে পারে যাকে মেডিকেলের ভাষায় Leg oedema বলে।


সাধারণত পা ফুলে যাওয়ার কারণ হলো

যখন সূক্ষ্ণ রক্ত নালী হতে তরল পদার্থ লিক করে বেরিয়ে এসে টিস্যুতে ছড়িয়ে পড়ে তখনই চামড়া সমেত পা ফুলে যায়।


১) দীর্ঘ সময় ধরে একইভাবে বসে থাকা কিংবা দাঁড়িয়ে থাকা (দীর্ঘ বিমান ভ্রমণ, ট্রাফিক পুলিশ কিংবা অপারেশনের সময় রোগীর পাশে দীর্ঘ সময় ধরে চিকিৎসকের কাজ করা)

২) অতিরিক্ত লবণাক্ত খাবার বেশি করে খাওয়া,

৩) দেহের ওজন বেড়ে যাওয়া,

৪) মাসিকের পূর্ববর্তী সময়ে,

৫) গর্ভবতী হওয়া,

৬) কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া - উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ (ক্যালশিয়াম চ্যানেল ব্রোকার), জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি, স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ, ব্যথানাশক ওষুধ (NSAIDs), হরমোন থেরাপি (ইস্ট্রোজেন), কিছু ডায়াবেটিসের ওষুধ (থায়াজোলিডিনেডিওন)

৭) পায়ে আঘাত জনিত কারণে (ভেঙ্গে গেলে, মচকে গেলে)

৮) পোকার কামড়ে (মৌমাছি, ভীমরুল)

৯) বিচ্ছুর কামড়ে,

১০) লিভার সিরোসিস,

১১) হার্ট ফেইলিউর,

১২) কিডনি ফেইলিউর,

১৩) পায়ের রক্ত নালী নষ্ট হয়ে গেলে (ক্রনিক ভেনাস ইনসাফিশিয়েন্সি)

১৪) লসিকা গ্রন্থি ও লসিকা প্রবাহ নষ্ট হয়ে গেলে (ক্যান্সার সার্জারির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায়)

১৫) খাবারে দীর্ঘ মেয়াদি প্রোটিনের ঘাটতি হলে,

১৬) পায়ের রক্ত নালীতে রক্ত জমাট বেঁধে গেলে (DVT)

১৭) পায়ে ইনফেকশন হলে (সেলুলাইটিস, ফাইলেরিয়াসিস)

১৮) ডায়াবেটিক ফুট


পা ফুলে গেলে পরে পায়ে কি কি পরিবর্তন আসে

  • পা স্বাভাবিকের চেয়ে ফুলে ওঠে,
  • পায়ের চামড়া চকচকে ও টানটান হয়ে যায়,
  • ফুলে যাওয়া পায়ের চামড়ার রং পরিবর্তিত হয়ে কালশিটে দাগ পড়ে, অস্বস্তি অনুভূত হয় এবং আঙ্গুলের ডগা দিয়ে চাপ দিলে চামড়া দেবে যায়।


প্রতিকার কি?

যা করতে হবে -

  • যখন সম্ভব হয় তখন ফুলে যাওয়া পা চেয়ার কিংবা বালিশের ওপর উঠিয়ে রাখতে হবে,
  • ফুলে যাওয়া পায়ে রক্ত সঞ্চালন বাড়ানোর জন্য হালকা ব্যায়াম যেমন হাঁটাহাঁটি করা যেতে পারে,
  • পায়ের সাথে মানানসই আরামদায়ক ছোট হিল এবং নরম সোলের জুতা পরা যেতে পারে,
  • ইনফেকশন এড়ানোর জন্য পা সর্বদা পরিষ্কার ও শুষ্ক রাখা এবং প্রয়োজনে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা।


যা বর্জনীয় -

  • দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকা কিংবা বসে থাকা যাবে না,
  • টাইট জুতা, মোজা কিংবা জামাকাপড় পরিধান করা যাবে না।


কখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন?

  • যদি এক পা কিংবা উভয় পা ফুলে যায় এবং বাসায় কয়েক দিন চিকিৎসা নেওয়ার পরও উন্নতি না হয়,


যদি বেশি খারাপ হয়ে যায় -

১) আঘাত কিংবা অন্য কোন কারণ খুঁজে না পাওয়া যায়,

২) যদি হঠাৎ করে ব্যথা হয়ে পা ফুলে যায় এবং মারাত্মক আকার ধারণ করে,

৩) যদি ফুলে যাওয়া অংশ লালা হয়ে যায় এবং স্পর্শ করলে গরম অনুভূত হয়,

৪) যদি শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায় এবং কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে,

৫) যদি পা ফোলার সাথে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস থাকে,

৬) যদি পা ফোলার সাথে বুকে চাপ, দমবন্ধ অনুভূত হওয়া এবং শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়,

৭) বুকে প্রচন্ড চাপ, ভার লাগা কিংবা ব্যথা করে,

৮) যদি কাশির সাথে রক্ত যায়


যথাযথ চিকিৎসা না পেলে যেসব জটিলতা দেখা দিতে পারে -

  • ক্রমাগত ব্যথাময় পা ফুলতেই থাকবে,
  • হাঁটতে অসুবিধা হবে,
  • পায়ের জোড়া শক্ত হয়ে আসবে,
  • ফুলে যাওয়া পায়ের চামড়া টানটান হয়ে আসবে এবং পরবর্তীতে অস্বস্তি লাগা ও চুলকানি দেখা দিবে,
  • ফুলে যাওয়া অংশে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে,
  • ফুলে যাওয়া অংশের চামড়া ফেটে যেয়ে রক্ত ও তরল গড়িয়ে পড়তে পারে,
  • ফুলে যাওয়া অংশে রক্ত পরিসঞ্চালন কমে যেতে পারে,
  • ফুলে যাওয়া অংশের ধমনি, শিরা, হাড়জোড়া ও মাংস পেশির স্থিতিস্থাপকতা কমে যেতে পারে,
  • চামড়ায় ঘা দেখা দিতে পারে।


Writer: Abu Taher

Post a Comment

Previous Post Next Post