দ্রুত বীর্যপাত বা প্রি-ম্যাচিউর ইজাকুলেশন


দাম্পত্য জীবনে ব্যাক্তিগত অস্থিরতা, হতাশা, দুশ্চিন্তা কিংবা পারষ্পরিক সম্পর্কের টানাপোড়েন এর অনেকগুলো কারনের মধ্যে অন্যতম পুরুষের দ্রুত বীর্যপাত সমস্যা। যৌনসমস্যা নিয়ে খোলাখুলি কথা বলা আমাদের সমাজে এক ধরবের ট্যাবু হওয়ায় হয়তো কখনো সামনে আসে না ব্যাপারগুলো


প্রি-ম্যাচিউর ইজাকুলেশান আসলে কি?

যৌনমিলনের সময় নিজের অথবা যৌনসঙ্গিনীর চাহিদার তুলনায় দ্রুত বীর্যপাত হওয়া অর্থাৎ যৌনসঙ্গম শুরু করার আগেই কিংবা যৌনসঙ্গম শুরুর একটু পরেই বীর্যপাত ঘটাকে প্রি-ম্যাচিউর ইজাকুলেশন বলে।


প্রি-ম্যাচিউর ইজাকুলেশনকে সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করা হয়:

প্রাইমারি প্রি-ম্যাচিউর ইজাকুলেশন : দাম্পত্য জীবনের একেবার প্রথম দিন থেকে শুরু হয়ে স্থায়ী হয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে - প্রথমবারের মত শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের শুরু থেকেই সর্বদা বা প্রায় সর্বদা, যৌনমিলনের ১ মিনিট বা তার কম সময়ে বীর্যপাত ঘটে।


সেকেন্ডারি প্রি-ম্যাচিউর ইজাকুলেশন : শুরুতে সমস্যাটি না থাকলেও জীবনের যেকোন সময় নতুন করে এই সমস্যাটির উপদ্রব ঘটতে পারে। এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য হারে যোনিপথে প্রবেশের শুরুর সময় থেকে বীর্যপাত এর আগ অবধি সময়টা কমে যাওয়া , সাধারণত ৩ মিনিট বা তার কম।


কারণ:

দ্রুত বীর্যপাত হওয়া একটি জটিল ব্যাপার এবং এর সাথে মানসিক ও জৈবিক দু’টিরই সম্পর্ক রয়েছে।


মানসিক কারণ:

প্রাথমিক বয়সে যৌন অভিজ্ঞতা ঘটলে তা এমন একটি ধরনে প্রতিষ্ঠিত হয় যে, পরবর্তী জীবনে সেটা পরিবর্তন করা কঠিন হতে পারে। যেমন-

1. লোকজনের দৃষ্টি এড়ানোর জন্য তড়িঘড়ি করে চরম পুলকে পৌঁছানোর তাগিদ।

2. অপরাধ বোধ, যার কারণে যৌনক্রিয়ার সময় হঠাৎ করেই বীর্যপাত ঘটে যায়।


পুরুষাঙ্গের শিথিলতা: যেসব পুরুষ যৌনমিলনের সময় তাদের লিঙ্গের উত্থান ঠিকমতো হবে কি না তা নিয়ে চিন্তিত থাকেন কিংবা কতক্ষণ লিঙ্গ উত্থিত অবস্থায় থাকবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভোগেন, সেসব পুরুষের দ্রুত বীর্যস্খলন ঘটে।


দুশ্চিন্তা: দ্রুত বীর্যপাত হয় এমন অনেক পুরুষের দ্রুত বীর্যপাতের একটি প্রধান কারণ দুশ্চিন্তা।


বীর্যপাতের আরেকটি প্রধান কারণ হলো অতিরিক্ত উত্তেজনা।


জৈবিক কারণ:

  • বিভিন্ন হরমোনের অস্বাভাবিক মাত্রা
  • মস্তিষ্কের রাসায়নিক উপাদান বা নিউরোট্রান্সমিটারের অস্বাভাবিক মাত্রা
  • বীর্যস্খলনব্যবস্থার অস্বাভাবিক ক্রিয়া
  • থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা
  • প্রোস্টেট অথবা মূত্রনালীর প্রদাহ ও সংক্রমণ
  • সার্জারি কিংবা আঘাতের কারণে স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি হওয়া।


 প্রি-ম্যাচিউর ইজাকুলেশন একটি সাধারণ যৌনগত সমস্যা, সঠিক চিকিৎসা ও থেরাপিতে যা সম্পূর্ণ নিরাময় যোগ্য। কিন্তু অনেক পুরুষ এ বিষয়ে তাদের চিকিৎসকের সাথে কথা বলতে কিংবা চিকিৎসা নিতে সঙ্কোচ বোধ করেন।


একটানা ৬ মাস বা তার অধিক সময় Premature Ejaculation এর সমস্যাটি চলতে থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরী। কারন সময় গড়ালে সমস্যাটির সমাধান কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। এমনকি পুরুষত্বহীনতা কিংবা ইনফার্টিলিটি ডেভেলপ করতে পারে।


ওষুধ, মাইন্ডফুলনেস বেসড সেক্স থেরাপি, সেক্সুয়াল হেলথ কাউন্সিলিং এই সমস্যাটি উত্তোরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম।


সেক্সুয়াল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এবং মনো সেক্সুয়াল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকবৃন্দ সব ধরনের যৌনরোগের বিজ্ঞানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করছেন। সরাসরি ডাক্তারের সামনে আসতে লজ্জাবোধ করলে ঘরে বসে অনালাইনেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।।


আরো পড়ুন: পুরুষের যৌন সমস্যার ধরন ও চিকিৎসা পদ্ধতি

Post a Comment

Previous Post Next Post