হঠাৎ পা মচকে গেলে কি করবেন?


রাস্তাঘাটে হাঁটার সময় হোঁচট খেলে পায়ের গোড়ালি মচকে যায়। কখনো বা গর্তে পড়ে গিয়ে, রিকশা বা বাস থেকে নামতে গিয়ে, সিঁড়ি থেকে নামার সময় ধাপে ঠিকমতো পা না পড়লে, খেলাধুলার সময়, এমনকি জুতার সমস্যার কারণেও গোড়ালি মচকাতে পারে। যেহেতু পা পুরো শরীরের ওজন বহন করে, তাই পায়ের গোড়ালি জয়েন্টর গুরুত্ব ও অনেক বেশী ৷ প্রায় 50% Ankle Sprain ক্রীড়া-সম্পর্কিত। গবেষণায় দেখা গেছে, যদি এটি সঠিকভাবে চিকিৎসা না করা হয় তবে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ এধরনের আঘাতের পুনরাবৃত্তি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ৷


পা মচকানো (ANKLE SPRAIN) কে ৩টি গ্রেডে ভাগ করা হয়েছে:

গ্রেড-১: মৃদু পা মচকানো, অর্থাৎ কেবল জয়েন্টের চারপাশের লিগামেন্ট স্ট্রেচ হওয়া বা টান লাগা; এ জন্য ঘরোয়া চিকিৎসাই যথেষ্ট।

গ্রেড-২: মাঝারি তীব্রতা, অর্থাৎ লিগামেন্ট খানিকটা ছিঁড়েও গেছে এবং গোড়ালির সন্ধিও গেছে মচকে।

গ্রেড-৩: তীব্র মাত্রার মচকানো হলো, লিগামেন্ট সম্পূর্ণই ছিঁড়ে যাওয়ার সঙ্গে গোড়ালির সন্ধি বেশ ক্ষতিগ্রস্ত। পরের দুটির জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা জরুরি।


প্রাথমিক চিকিৎসা (First Aid)

গোড়ালি মচকানোর (Ankle Sprain) বহুল প্রচলিত ঘরোয়া চিকিৎসা পদ্বতি হচ্ছে: PRICE (Protection, Rest, Ice, Compression, Elevation). তবে আধুনিক গবেষণা বলছে, বেশী বিশ্রাম (Rest) এবং ওভারপ্রোটেকশন দ্রুত সুস্থ হওয়ার পথে অন্তরায় হতে পারে ৷ এক্ষেত্রে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গোড়ালির ব্যথামুক্ত এক্সারসাইজ শুরু করা বাঞ্ছনীয় ৷ তবে তা নির্ভর করে মচকানোর তীব্রতার উপর ৷


চিকিৎসার দ্বিতীয় ধাপ, ফিজিওথেরাপির উদ্দেশ্য হ'ল গোড়ালি জয়েন্টগুলির রেন্জ অব মোভমেন্ট (ROM) পুনরুদ্ধার করা এবং জয়েন্টগুলি তৈরি করে যে লিগামেন্ট, টেন্ডস এবং মাংসপেশী তাদের শক্তি পুনরুদ্ধার করা ৷


কী করবেন?

বিশ্রাম নিতে হবে

পা ফুলে গেলে এবং প্রচণ্ড যন্ত্রণা অনুভব হলে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বিশ্রাম। যন্ত্রণা কমে গেলেও বিশ্রাম না নিয়ে হাঁটাহাঁটি, খাটাখাটুনি করলে গোড়ালির ফোলা থেকেই যাবে। তাই এ সময় অন্তত দুই থেকে তিন দিন বিশ্রাম নিন।


বরফ লাগান

পায়ের ফোলা ভাব কমাতে সবচেয়ে উপকারী বরফ। সরাসরি বরফ দেবেন না, একটা পরিষ্কার কাপড়ে বরফ পেঁচিয়ে সেটা দিয়ে সেঁক দেওয়াটা সঠিক উপায়। চোট পাওয়ার প্রথম ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা বা ফোলা না কমা পর্যন্ত প্রতি এক-দুই ঘণ্টা অন্তর ১০ থেকে ২০ মিনিট ধরে আইস প্যাক লাগান। এতে ফোলা ভাব অনেকাংশে কমে যাবে।


ক্রেপ বা ব্রেস পরুন

গোড়ালির ফোলা ভাব কমাতে যেমন সাহায্য করবে আইস প্যাক, তেমনই যন্ত্রণা উপশমে কাজে আসবে ক্রেপ বা ব্রেস। চোট পাওয়ার প্রথম ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টা অবশ্যই ব্রেস লাগিয়ে রাখুন। এতে ব্যথা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তবে অতিরিক্ত টাইট করে ব্রেস লাগাবেন না|


পা ওপরে তুলে রাখুন

পা যত নামিয়ে বা নিচে ঝুলিয়ে রাখবেন, তত ফোলা বাড়বে। তাই দিনে অন্তত দুই থেকে তিন ঘণ্টা পা ওপরে তুলে রাখুন। শোয়ার সময় হার্ট লেভেলের থেকে পা উঁচুতে রাখবেন। এতে খুব দ্রুত ফোলা ভাব কমে আসবে।


সতর্কতা

বারবার একই জায়গায় পা মচকালে পরে ওই সন্ধিতে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষয়জনিত সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই খেলাধুলা ও দ্রুত হাঁটাচলার সময় সাবধানে থাকুন, পায়ের পাতার ভারসাম্য বজায় থাকে এমন জুতা পরুন, সিঁড়ি ভাঙার সময় সাবধান হোন।


আরো পড়ুন: পা ফুলে যাওয়ার কারণ ও প্রতিকার

Post a Comment

Previous Post Next Post