সিজার অপারেশন নিয়ে কছু কথা

সিজার করলে একটাই সুবিধা - "প্রসব বেদনা টের পাওয়া যায় না"। ""কিন্তু যারা এটা টের পায় না , তারা মাতৃত্বের স্বাদও পুরা পায় না"। ""নরমাল ডেলিভারির বাচ্চা হইতে ১টা পেইন , কিন্তু সিজারের পেইন সাড়া বছর""। সেটা শুরু অপারেশনের পরের দিন থেনে প্রচন্ড মাথা ব্যাথা দিয়ে। তার উপর একবার সিজার মানে পরের বাচ্চাও সিজার বাধ্যতামূলক।

পেট দিয়ে জরায়ুর নিম্নাংশ কেটে বেবী বের করার পদ্ধতি হলো সিজারিয়ান সেকশন। এর আরেক নাম হলো – “হিস্টেরোটমি”। আধুনিক সিজারিয়ান সেকশন প্রথম হয় ১৮২৬ সালে। তাও “আমার” জন্মদিনের দিন। ২৫ জুলাই। দক্ষিন আফ্রিকার কেপ টাউন শহরে।

বলা হয়ে থাকে পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশী সিজারিয়ান অপারেশন হয় চীনে। প্রতি ২ জন শিশুর ১ জন (প্রায় ৫০% ) জন্ম নেয় সিজারে এই দেশে। আর সবচেয়ে কম সুইডেন আর আইসল্যান্ডে। মাত্র ১৪%। বাংলাদেশে প্রায় ২৫% শিশুর জন্ম হয় এই মাধ্যমে।

এখন সাড়া পৃথিবী তে ইন্ডিকেশন ছাড়াইঃ অবস্ট্রেটিশিয়ানের ম্যাল্প্রাক্সিস ও মায়ের ব্যাথার ভয়- দুইয়ে মিলে সিজারিয়ান বেবী হওয়া যেন বাধ্যতামূলক হয়ে দাড়িয়েছে।

আসুন এবার জেনে নেই এই নাম কোথা থেকে আসলো। বলা হয়ে থাকে খ্রিষ্ট পূর্ব ৭০০ সালের দিকে “Lex ceasaria” নামের এক মহিলার পেট থেকে মরা বাচ্চা বের করা হয়। সবাই বিশ্বাস করেন এই মহিলার নাম অনুসারেই পেট কেটে বাচ্চা বের পদ্ধতিই সিজারিয়ান সেকশন।

কিন্তু কিছু মহলের ধারনা - রোমান শাসক “জুলিয়াস সিজার” (Juius Ceasar) এর জন্ম হয় এই সিজারিয়ান সেকশনের মাধ্যমে। তাই তার পর থেকে এই পদ্ধতি তে বেবী ডেলিভারির নাম নামকরণ করা হয় ঐ বিখ্যাত সম্রাটের নামে। কিন্তু অক্সফোর্ড ডিকশনারীর মতে “caedere” থেকে সিজার শব্দের উৎপত্তি। আর এই শব্দের মানে হলো- "পেট কেটে বেবী বের করা"।

শাহনামা মহাকাব্যের অন্যতম গল্প “সোহরাব- রুস্তম” গল্পের অন্যতম নায়ক “রুস্তম” এর জন্ম হয়েছিল এই সিজারিয়ান সেকশনে। মেডিকেল ভাষ্যঃ সিজারিয়ান সেকশনে যে incision দেয়া হয় তার নাম Pfannenstiel ইনসিশন। ১৯০০ সালে হারম্যান ফেনেনস্টেইল এই পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। তার নাম অনুসারেই এই নামকরন করা হয়েছে। ফাইনাল প্রফ পরীক্ষার জন্য এই আবিষ্কারকের নামের বানান টা শিখে যাইয়েন ভালো করে।

সিজার/কেচি দিয়া অপারেশন করে বলে জনগন কে ভুল বুঝাবেন না। সিজার বা কেচি লাগে সুতা কাটতে , তাই বলে পেট কাটতে না। আর একটা কথা- এক সিজারিয়ান অপারেশন আরেক সিজারিয়ান অপারেশন কে বাধ্য করে। তাই ইন্ডিকেশন ছাড়া সিজারিয়ান অপারেশন না করাই ভালো।

সিজার করতে যেমন পিঠে ইঞ্জেকশন দিয়ে কোমড়ের নিচে পুরা অবশ করে ফেলে, তেমনি হার্নিয়া অপারেশনেও একি ভাবে অবশ করা হয়। একে Spinal Aneathesia বলে। এতে করে পেটের উপরের ভাগে বোধ শক্তি ঠিক থাকে, নিচের ভাগে সেন্স নাই।

এইসব অপারেশন করার সময় ডাক্তাররা যেসব কথা বলে রোগী সব শুনতে পায় ও বুঝতে পারে। মাঝে মাঝে সার্জনও রোগীকে সাহস দিতে রোগীর সাথে কথা বলে থাকেন।


লিখেছেন- ডাঃ সাঈদ সুজন

Post a Comment

Previous Post Next Post