শুধু কি লাইফবয় সাবানেই জীবানু ধ্বংস করে?

'হাত ধোঁয়া' আমাদের Feco oral রুটের সব ইনফেকশন প্রতিরোধ করতে পারে। সেটার জন্য উত্তম উপায় হলো সাবান দিয়ে হাত ধোঁয়া। আমাদের মনে রাখতে হবে বাতাসের মাধ্যেমে যেসব রোগ হয় , বিশেষ করে যক্ষা, হাম, চিকেন পক্স, ইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদি রোগ হাত ধোঁয়া ঠেকাতে পারে না। “সেন্টার ফর ডিজেজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন” হাত ধোঁয়া কে feco oral রুট দিয়ে যেসব ইনফেকশন হয়, তা প্রিভেনশনের হাতিয়ার বলেছেন।

বলা হয়ে থাকে – চলতি ট্যাপের পরিষ্কার পানি তে ৩০ সেকেন্ড হাত ধরে রাখলেই ৯৬% জীবানু চলে যায়। আর সাবান দিয়ে ধুলে তা প্রায় ৯৯% পর্যন্ত পরিষ্কার হয়। সাবান দিয়ে হাত ধুইলে যেসব জীবানু পরিষ্কার হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য- স্ট্যাফাইলোকক্কাস, হেপাটাইটিস, ফাংগাস, হার্পিস , রাইনোভাইরাস, টাইফয়েড উল্লেখযোগ্য।


আমরা জানি , সাবান হলো স্টিয়ারিক এসিডের একটি লবন মাত্র। এর সাথে বিভিন্ন সুগন্ধী ও কেমিকেল মিশিয়ে ব্যবহারের উপযোগী করা হয়। সাবানের ময়লা পরিষ্কারের মেকানিজম হলো – Detergent effect বা Surface tension কমিয়ে দেয়া। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের মতে – সাবান দিয়ে কম পক্ষে “২০ সেকেন্ড” হাত ধৌত করতে হবে। ত্রিশ সেকেন্ড হলে আরো ভালো হয়।

তাত্তাড়ি হাত ধোঁয়ার নাম করে সাবান ব্যবসা করছে “লাইফবয়”। জীবানু ধ্বংস করে এবং ১০ সেকেন্ডে পরিস্কার হয় এই মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে সাবান বিক্রী করছে। এটে আমাদের দেশে স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের নজর কাড়ে অনায়াসেই। আর বিজ্ঞাপনে ডাক্তার সাজিয়ে মিথ্যা বলাকে মানুষ অন্ধের মত বিশ্বাস করে।

CDC এর গাইডলাইনে স্পষ্ট উল্লেখ আছে – যে কোনো প্রকার সাবানেই জীবানু ধৌত করার উপাদান সমান ভাবে বিদ্যমান। এবং তা সমান ভাবে কার্যকরী। সেই সেন্সে লাইফবয়ের মধ্যে অতিরিক্ত এমন কিছু নাই, যা এর বিশেষত্ব এনে দিবে। তার উপর ১০ সেকেন্ডে কাজ করার কথা WHO এর গাইডলাইনের বিরোধী। সাবান কে এন্টিসেপ্টিক সাবান বলা হয় – যখন এর মধ্যে “ট্রাইক্লোজান” যোগ করা হয়। কারন তার জীবানু ধ্বংসকারী গুন আছে। কিন্তু আমাদের দেশের কোনো সাবানেই সেই জিনিটা নাই। তাইলে লাইফবয়, কসকো সাবান আর আলমের এক নাম্বার পচা সাবানের মধ্যে পার্থক্য কি রইলো।

হাত ধোঁয়ার জন্য উত্তম উপায় হলো – এলকোহল বেজড হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা। সেটা তে মোটামুটি সব ধরনের অরগানিজম মারা যায়। যেখানে সাবান পাওয়া না পাওয়া যায় , সেখানে ছাই অথবা বালু দিয়ে হাত ধুইতে বলা হয়েছে। এটাও WHO এর গাইডলাইনের শেষ কথা।

পুনশ্চঃ
হাত ধোঁয়া স্বাস্থ্য সচেতনতার লক্ষণ। কিন্তু বার বার হাত ধুয়ে চামড়া ক্ষয় করে ফেলা কিন্তু মানসিক রোগের লক্ষণ। যাকে আমরা OCD ডিজেজ বা শুচিবায়ু বলে থাকি।


লিখেছেন- ডাঃ সাঈদ সুজন

Post a Comment

أحدث أقدم