হাইপ্রেসার, ডায়াবেটিস, ক্যানসার কেন এত বেড়ে গেছে?


হাইপ্রেসার, ডায়াবেটিস, ক্যানসার কেন এত বেড়ে গেছে? 

আমাদের বাবা-দাদাদের সময় বর্তমানের মত এত ডায়াবেটিস, হাইপ্রেসার, ক্যান্সার ছিল না। গত ২০-৩০ বছরে দেশে এমন কি হল যে এই রোগগুলো এত বেড়ে গেল। এখন প্রতি ঘরে ঘরে ডায়াবেটিস, হাইপ্রেসার, ক্যান্সার। আমার কিছু অব্জারভেশন আছে। যেমন-


১। আগে মানুষ প্রধানত হেঁটে যাতায়ত করত। আর এখন সম্ভব হলে পায়খানা-প্রস্রাব করতেও আমরা গাড়ি বা রিকসা ব্যবহার করতে চাই।


২। আগে সকালের নাস্তা সকাল ৭টা বা সরবোচ্চ ৮ টার মধ্যে মুড়ি বা চিড়া খেত, এরপর ৯ টার দিকে পেট ভরে ভাত খেত, দুপুরে হাল্কা কিছু আর সন্ধ্যার আযানের পর ভাত খেয়ে, রাত ৯ টার মধ্যে ঘুম। আর এখন সকালের নাস্তা খাই ১১ টা থেকে ১২ টায়, আইটেম পরাটা, বাটার, চিকেন সুপ ইত্যাদি। দুপুরের খাবার ৩ টা, আর রাতের খাবার ১০-১২টা। এর মাঝে নাস্তা হিসেবে চিকেন গ্রিল, নান-রুটি, বার্গার, স্যান্ড উইচ, ব্লাক ফোরেস্ট ইত্যাদি নাম না জানা আরও কত কি।


৩। আগে রাস্তা ঘাটে কেউ ধূমপান করত না। করলেও বয়স্ক মানুষরা, কম বা মধ্য বয়সী কেউ রাস্তা-ঘাটে ধূমপান করত না, করলেও আড়ালে গিয়ে। আর এখন বাইরে বের হলে ধূমপান করে না এমন কাউকে পাওয়া মুশকিল। আর সবচেয়ে বিরক্তিকর হচ্ছে, আপনি দাঁড়িয়ে বা বসে আছেন, আমাদের তথাকথিত শিক্ষিত ভাইয়েরা একটা বিড়ি নিয়ে আপনার পাশে এসে মনের সুখে টানা শুরু করবে। এছাড়াও অ্যান্টি-দাদীরাও পিছিয়ে নেই-জরদা, আলোয়া, গুল, তামাকের পাতা তাদের নিত্য সঙ্গী।


৪। আগে ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে মানুষ হাঁটাহাঁটি করত, একসাথে সবাই মিলে আড্ডা দিত। আর এখন ভোর পর্যন্ত তো ঘুম ধরেই না, ফেসবুক, মেসেঞ্জার, ইমো এগুলোতে ভোর ৪ টা বাজে। “সকালে বেলার হাওয়া আর হাজার টাকার দাওয়া’এই প্রবাদকে ভুল প্রমান করে সকালের ঘুম ভাংগে ১০ টা থেকে ১১ টায়, কিসের হাঁটাহাঁটি আর কিসের আড্ডা।


৫। আগে টিভি বলতে বিটিভি ছিল, আমরা আলিফ-লায়লা, ম্যাকগাইভার ছিল আমাদের প্রধান টিভি শো। আর রাত ১১.৩০ এর পর বিটিভি বন্ধ হয়ে যেত, তাই ইচ্ছে থাকলেও তিভি দেখা যেত না। আর এখন স্যাটেলাইট চ্যানেলের জন্য দিন-রাত ২৪ ঘন্টা, এমনকি টয়লেটের কমোডে বসেও যেন টিভি দেখা যায় ফাইভ স্টার হোটেল গুলোতে সে ব্যাবস্থা আছে। আর আমাদের সিরিয়াল তো শেষ হয় না, সন্ধ্যায় কেউ মিস করলে, রাতে, রাতে মিস করলে সকালে, সকালে মিস করলে দুপুরে। নিজের প্রাকৃতিক ডাক মিস হতে পারে কিন্তু পারুলের বিয়ে, তোমার জন্য মন পাগল, মন বসে না পড়ার টেবিলে কখনও মিস হবে না গ্যারান্টি।


৬। আগে আমাদের বাজারে শুধু একটি ঔষধের দোকান ছিল। তাও সব সময় খোলা থাকত না। সকালে ২ ঘন্টা আর বিকেল সন্ধ্যা মিলিয়ে ৩ ঘন্টা। আর এখন ওই বাজারেই ৫ টি ঔষধের দোকান। লোকজন বেড়েছে, রোগ বেড়েছে তাই এ অবস্থা। তবে আরো আছে ঔষধের সহজলভ্যতা। হাতের কাছে দোকান, যা চাই তাই কিনতে পারি, ফলে ঔষধ আজ পানি-পান্তা। মনের সুখে গ্যাসের ঔষধ, এ্যন্টিবায়োটিক, ব্যাথার ঔষধ খাচ্ছি। আর নিজের ওজান্তেই নিজেকে ক্ষতি করছি।


৭। আমি বাবা-মার ৫ম ও শেষ সন্তান। আমি বিকেলে বাবার সাথে বাজারে আমাদের একটা রাইচ মিলে যেতাম, উদ্দেশ্য প্রধানত ওখান থেকে ফেরার সময় একটা পাইন অ্যাপেল বিস্কুটের প্যাকেট বা কয়েকটি নাবিস্কো চকলেট। যাই হোক বিকেল বেলা ওখানে যাবার আগে বাবা নাস্তা খেতেন চালের গুড়া, বা আদাকুটা বা চাল চিড়া, মুড়ি ইত্যাদি দিয়ে। সেই সময় থেকে বাবার সাথে আমিও ওগুলো খেতাম। তাই ছাড়তে পারিনা, আর ছাড়তেও চাই না।


আমাদের অনেক পরিবর্তন/উন্নতি হয়েছে। তবে তার ফলস্বরূপ অনেক ক্ষতিও হচ্ছে আমাদের। আমাদের ঠিক করা উচিত কোনটা ভালো ছিল, আর কোনটা ভালো হবে। বিজ্ঞানের ফল অবশ্যই আমাদের ভোগ করতে হবে কিন্তু কোন ভাবেই নিজের জীবনের বিনিময়ে (ডায়াবেটিস, হাইপ্রেসার, ক্যান্সার, হার্টের অসুখ, কিডনীর অসুখ, স্ট্রোক) নয়। প্রান খুলে হাসুন, স্বাস্থ্যকর খাবার খান, প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটুন, পর্যাপ্ত ঘুমান; ভালো থাকুন।


©Dr. Ratin (Medicine Specialist)

Post a Comment

Previous Post Next Post