টাকু আংকেল



আমার প্রথম প্রেমিকা ছিলো অনামিকা,এক বড় দাদার শ্যালিকা।

আমি তখন সবেমাত্র ক্লাশ ওয়ানে উঠেছি।অনামিকা তখন ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্রী।'গায়ে হলুদ' গায়ের রং, হরিনী চোখ, মায়াবি মুখের মাঝারি গড়নের তাকে প্রথম যেদিন দেখি, খুব ভালো লেগে যায়।

সে ভালো লাগার কথা এক দুষ্টু কাকাকে বলছিলাম।উনি সে কথা অনামিকা কে জানিয়ে দেন। অবশেষে প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া দেয় অনামিকা। প্রেম হওয়ার পর প্রথম ডেটেই সে আমাকে কোলে তুলে নিছিলো।

এরপরে যতবার দেখা হতো,সে আমাকে কোলে তুলে নিতো। নাকের সর্দি পরিষ্কার করে দিতো,খাইয়ে দিতো, গালে ঠোটে অগনিত চুমু খেতো, এমনকি মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিতো।

প্রেম এভাবে গভীর থেকে গভীরতর হয়।আমি ক্লাশ টুতে উঠি।অনামিকা অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হয়।

ঠিক তখনই সুখের প্রেমে বিরহ নেমে আসে।

অনামিকা কে দেখতে আসে বিসিএস ক্যাডার কলেজের প্রভাষক বুড়ো টাকলু কাকু। অনামিকা সেদিন ও আমাকে কোলে নিয়ে ঘুরছিলো। কিন্তু যখন অনামিকা ওই বুইড়া কাকুর সাথে পরিচিত হওয়ার জন্য আমাকে কোল থেকে নামিয়ে চলে গেলো তখন আমি খুব কষ্ট পেয়েছিলাম;বুঝে গেছিলাম "এই বুঝি অনামিকা অন্য কারো হয়ে গেলো"

রাগে দুঃখে ক্ষোভে খাওয়া দাওয়ার প্রোগ্রাম শেষে টাকলু কাকুর মাথায় তবলা বাজাইছিলাম।

অনামিকারে বলছিলাম,"তুমি বিয়ে তইরো না। আমি বড় হয়ে তোমারে তাতরি করে তাওয়াবো।"

অনামিকা হাসতে হাসতে বলেছিলো,"তুমি বড় হও সোনা।তার পর ডাক্তার হয়ে টাকলু হয়েও,আমার চেয়ে অনেক সুন্দরী অন্য কারো প্রেমিকারে বিয়ে করতে পারবা"

আমি কেদে দিয়ে বলছিলাম,"আমি তোমারেই টাই। তুমি তলে গেলে আমি তাল তোলে উঠবো"

অনামিকা সান্ত্বনা দিয়ে বিয়েতে ঠিক ই বসে গেছিলো। বিয়ের রাতে অনামিকার কোলে বসেই তার বিয়ে হওয়া দেখি।টাকলু কাকু আমার প্রেমিকাকে বিয়ে করতে পেরে খুব খুশি মুডে ছিলো। উনার হাসি মুখ দেখে মন চাচ্ছিলো উনার টাকে বেল ফাটাই।

পরদিন অনামিকাকে শ্বশুড় বাড়ি নিয়ে যাওয়ার আগ মুহুর্তে ও সে আমাকে কোলে তুলে নিয়ে গালে,ঠোটে অবৈধ চুমু খেয়েছিলো।তার সে কি কান্না। আমি ও তার কান্না দেখে অনেক কেদেছিলাম।প্রেমিক প্রেমিকাদের মধে গভীর প্রেম থাকা সত্ত্বেও কোন কারনে অন্য জায়গা বিয়ে হলে ওভাবে কাদে সে দিন ই বুঝছিলাম।

বেকার বলে,অনামিকা চলে গেলো।আমি একা হয়ে গেলাম। অনামিকার কোল কে খুব মিস করতাম। বিয়ের পরে কয়েক বার তার সাথে দেখা হইছিলো তখন ও সে আমাকে তার অবৈধ কোলে নিয়েছিলো।

এরপর দীর্ঘ দিন তার সাথে দেখা নাই।

ভুলতেই বসছিলাম তাকে।সে সংসারী আর আমি ও  স্বার্থ পরের মতো তাকে ভুলে অন্য নারীর প্রেমে মজলাম। ভালোবাসা বুঝি এভাবেই নিঃশেষ হয়ে যায়।

অতঃপর দীর্ঘ কুড়ি বছর পরে অনামিকার সাথে দেখা। বয়সের ছাপ পড়ছে তার চেহারায়।ছেলে এইচ এস সি অটোপাশ করেছে,মেয়ে ক্লাশ টেনে পড়ে। অনামিকা হাসতে হাসতে বললো,"কি ডাক্তার সাব,কোলে উঠবা"

আমি লজ্জা পেয়ে যাই।

এরপর অনামিকা  মাথার চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বলতে থাকলো,"এখন ও টাকু আংকেল হওনি, সোনা। এখনি প্রেমিকা বানাইও না,কোন এক টাকু আংকেল এসে ঠিক ই বিয়ে করে নিয়ে নিবে।হুদাই কান্না করবা। আগে ক্যারিয়ার উজ্জ্বল হোক,টাক হোক এরপর অন্যের সুন্দরী গার্ল ফ্রেন্ডদের বিয়ে করে প্রথম প্রেমিকার বিয়ের প্রতিশোধ নিও, সোনা"

আমি বাধ্য ছেলের মতো,মাথা নেড়ে সায় দিলাম। প্রথম প্রেমিকার কথা বলে কথা

লেখাঃ ডা. অরিন্দম ভক্ত পিংকু

Post a Comment

أحدث أقدم