পুরুষের লজ্জাজনক একটি সমস্যা গাইনেকোমাস্টিয়া



কি?

গাইনেকোমাস্টিয়া হলো পুরুষের অস্বাভাবিক স্তন বৃদ্ধি ।


গ্রিক শব্দথেকে গাইনেকোমাস্টিয়া শব্দটি এসেছে । ‘গাইনি’ শব্দের অর্থ ‘মহিলা’ এবং ‘মাস্টোস’ শব্দের অর্থ স্তন।


অস্বাভাবিক স্তন বৃদ্ধি নবজাতক, বয়ঃসন্ধিকালে ও বৃদ্ধবয়সে শরীরবৃত্তীয় কারণে হতে পারে। বয়ঃসন্ধি কালে অনেক ছেলেদের এ অবস্থা হতে পারে , তবে অনেক ছেলের স্তনের বৃদ্ধি দু’বছরের মধ্যে ছোট হয় বা মিলিয়ে যায়।


গাইনেকোমাস্টিয়া হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে পুরুষের শক্ত স্তন টিস্যু গঠিত হয়। এই স্তন টিস্যু সাধারণত দেড় ইঞ্চির ছোট হয় এবং সরাসরি এটা স্তনবৃত্তের নিচে অবস্থান করে। গাইনেকোমাস্টিয়া এক পাশে বা দু’পাশেই হতে পারে। এ অবস্থা স্তনে ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।


কারন কি?

  • সাধারণভাবে সেক্স হরমোনের বৈষম্যকে এর জন্য দায়ী করা হয়।
  • স্তন টিস্যুর বৃদ্ধির কারণেও স্তন বড় হতে পারে। অনেক সময় স্তনে অতিরিক্ত চর্বি জমলে স্তন বড় দেখায়, তবে এটা গাইনেকোমাস্টিয়া।
  • শারীরবৃত্তীয় গাইনেকোমাস্টিয়া নবজাতক, বয়ঃসন্ধিকালে বা বয়ঃসন্ধিকালের আগে এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে হতে পারে।
  • অনেক গাইনেকোমাস্টিয়ার কারণ অজানা, অর্থাৎ এদের নির্দিষ্ট কারণ জানা যায় না। ২৫% ক্ষেত্রে গাইনেকোমাস্টিয়ার কারণ জানা যায় নি।
  • হরমোনসহ বিভিন্ন ওষুধ গ্রহণ, সিরাম ইন্ট্রোজেনের বৃদ্ধি। 
  • টেস্টোস্টেরনের উৎপাদন কমে যাওয়া।
  • অ্যানড্রোজেন রিসেপ্টরের ত্রুটি। 
  • দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ। 
  • দীর্ঘস্থায় লিভারের রোগ, লিভার সিরোসিস অসুখে গাইনেকোমাস্টিয়া হতে পারে। 
  • এইচআইভি এবং অন্যান্য দীর্ঘ মেয়াদি রোগ। 
  • স্পাইনাল কর্ডে আঘাতের কারণে এবং দীর্ঘদিন অভুক থাকার পর খাওয়ার পরে গাইনেকোমাস্টিয়া হতে পারে। 
  • বয়ঃসন্ধিকালের পরবর্তী পুরুষদের বিভিন্ন এলোপ্যাথিক ওষুধ ১০-২০% ক্ষেত্রে গাইনেকোমাস্টিয়া ঘটায়। এসব ওষুদের মধ্যে রয়েছে সিমেটিডিন, ওমিপ্রাজল, স্পাইরোনোল্যঅকটন, ইমাটিনিব মিসাইলেট, ফিনাস্টেরাইড এবং কিছু নির্দিষ্ট অ্যান্টি সাইকোটিক ওষুধ। 
  • কিছু ওষুধ সরাসরি স্তন টিস্যুর উপর কাজ করে আবার কিছু এলোপ্যাথিক ওষুধ ডোপামিনের কাজ বন্ধ করার মাধ্যমে পিটুইটারি থেকে প্রোলাকটিনের নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়। উল্লেখ্য যে, প্রোলাকটিক হলো স্তন তৈরির হরমোন। 
  • শক্তিবৃদ্ধিকারী ফুডসাপ্লিমেন্ট হিসেবে ব্যবহৃত অ্যাড্রোসটেনেডিওন ইস্ট্রোজেনের অতিরিক্ত কারযকারিতার মাধ্যমে স্তনের বৃদ্ধি ঘটাতে পারে। 
  • প্রোস্টেট ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত এলোপ্যাথিক ওষুধ যেমন অ্যান্টি অ্যানড্রোজেন এবং ডিএনআরএইচ অ্যানালগগুলো গাইনেকোমাস্টিয়া ঘটাতে পারে। 
  • মারিজুয়ানা গাইনেকোমাস্টিয়া একটি কারণ, অবশ্য এ নিয়ে মতভেদ আছে।
  • কিছু নির্দিষ্ট অন্ডকোষের টিউমার এবং হাইপারথাইরয়েডিজম রোগে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বেড়ে যায়। কিছু অ্যাড্রেনাল টিউমার অ্যান্ড্রোসটেনেডিওনের মাত্রা বাড়ায়। এই অ্যান্ড্রোসটোনডিওন অ্যারোম্যাটেজ নামক এনজাইম দ্বারা ইস্ট্রোন-এ রূপান্তরিত হয়। এই ইস্ট্রোন হলো ইস্ট্রোজেনের একটি ধরন। অন্যান্য যেসব টিউমার এইচসিজি নিঃসরণ করে, তা ইস্ট্রোজেনের পরিমাণ বাড়াতে পারে। 
  • মোটা মানুষের গাইনেকোমাস্টিয়ার প্রবণতা থাকে।
  • পুরুষ হরমোন টেস্টোস্টেরনের উৎপাদনের মাত্রা কমে গেলে গাইনেকোমাস্টিয়া হতে পারে। এই টেস্টেস্টেরনের উৎপাদনের মাত্রা কমে যেতে পারে। জন্মগত বা অর্জিত অন্ডকোষের সমস্যার কারণে। হাইপোথ্যালামাস কিংবা পিটুইটারির রোগও টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমাতে পারে। অ্যানাবলিক অ্যান্ড্রোজেনিক স্টেরয়েডের অপব্যবহারও একই প্রভাব ফেলে।


চিকিৎসা

এলোপ্যাথিক চিকিৎসা হলো অপারেশন । হোমিওচিকিৎসায় অপারেশনের ঝুকি এড়ানো যায় । একজন অভিজ্ঞ হোমিও চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ ব্যবহার করলে গাইনেকোমাস্টিয়ার লজ্জা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব ।


লেখক: ডা: মোঃ ফাইজুল হক

Post a Comment

Previous Post Next Post