টাক মাথায় চুল গজানো নিয়ে বিস্তারিত তথ্য


মাথার চুলের জীবনচক্র এমন যে শতকরা আশিটা চুল থাকে বৃদ্ধির স্তরে , বাকি কুড়িটা স্থিতাবস্থা বা পরিণতির স্তরে। দিনে ৫০-৬০টা চুল ওঠা স্বাভাবিক প্রাকৃতিক এক নিয়ম। এর বদলে নতুন চুল গজায় আপনা থেকে।


চুলের ত্বকের ভেতরকার অংশ থাকে কেশকূপ বা ‘হেয়ার ফলিকল’ - এর মধ্যে, যার গোড়ায় সাজানো থাকে সজীব কিছু কোষ বা ‘হেয়ার ম্যাট্রিক্স'। চুলের রং, গড়ন, বৃদ্ধি, চুল পড়া, টাক পড়া— সবই এই কোষগুলোর কাজ। বংশগতি ছাড়া পুং - হরমোন অ্যান্ড্রোজেনের কিছু প্রভাব থাকে এগুলোর ওপর।


একটা বয়সে চুল পড়ে টাক পড়া বেশিরভাগ সময় বংশগত। একে আটকানোর ক্ষমতা কোনও ওষুধের নেই, কোনওদিন থাকবেও না।


পরচুলা পড়া, হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্ট বা এখনকার হেয়ার উইভিং পদ্ধতিতে টাক ঢাকা ছাড়া, টাকে চুল গজানো অসম্ভব।


হাজার মলম, হাজার ভিটামিন, ভাইটালাইজার, ফার্টিলাইজার ( ! ) যাই মাথায় ঘষুন, টাক পড়ার হলে পড়বেই। বেশি বয়সে নিয়ম মেনে হালকা হবে চুল। যৌবনান্তে শরীরে পুং হরমোন বেড়ে চুল পড়বে কিছু মহিলার, কারও বা দেখা দেবে টাক। মাথার ত্বকের নানা রোগে চুল বেশি পড়তে থাকলে অবশ্য অনেক সময় চর্মরোগের চিকিৎসায় কাজ হয়।


প্রচণ্ড মানসিক চাপ, অসুখ বা অপুষ্টিতে ভুগলে হঠাৎ করে বেড়ে যেতে পারে চুল ওঠা। ক্যানসার কেমোথেরাপির কিছু ওষুধে এরকম হতে পারে। এক্ষেত্রে মূল কারণটা দূর হলে আবার গজাবে চুল। সে আপনি মাথায় কিছু লাগান বা না - লাগান। যতক্ষণ কেশকূপ বেঁচে আছে, চুল আবার গজাবে, কেশকুপ ধ্বংস হলে গজাবে না।


কেশকুপকে বা ম্যাট্রিক্সের কোষগুলোকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা কোনও মলম, তেল বা ভাইটালাইজারের নেই। নেই কোনও সাবান বা শ্যাম্পুর। বিজ্ঞান তাই বলে।


মাথার তেলের একমাত্র কাজ চুলকে চকচকে করা। শরীরের পুষ্টিই চুলের পুষ্টি। চুলের গোড়ায় কালমেঘ ঘষুন বা জবাপাতা বাটা, ভিটামিনযুক্ত তেল ঘষুন বা প্রোটিন বা গালভরা নামের অন্য ওষুধ, কোনওটাই চুলের গোড়ায় গিয়ে পুষ্টি জোগায় না, জোগাতে পারে না।


বহু চুলের তেল বা শ্যাম্পুতে থাকা ‘ আধুনিক ওষুধ ’ (যদি আদৌ থাকে !) চুল ধোওয়ামাত্র বেরিয়ে যাবে পানির সঙ্গে, চুল থাকবে যে - কে - সেই।


ওষধিযুক্ত তেল, ভিটামিনযুক্ত ভাইটালাইজার বা শ্যাম্পু অথবাঁ কেরাটিনযুক্ত চুলের আশ্চর্য তরল মাখা আর না - মাখা তাই এক ব্যাপার।


চিকিৎসাবিজ্ঞানের আলোয় চুল নিয়ে এই হল মোদ্দা কথা। এবার চুলে কী মাখবেন, কেন মাখবেন, এসব নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে ভাবনাচিন্তা করে।

Post a Comment

Previous Post Next Post